বেসিক ব্যাংকে হয়েছে দুর্নীতি আর সোনালীতে ডাকাতি

বেসিক ব্যাংকে উচ্চপর্যায়ের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়েছে। আর সোনালী ব্যাংকে যা হয়েছে, তাকে বলা যায় বড় ধরনের ডাকাতি।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান ছিলেন সভাপতি। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সালাম।
বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের নাম উল্লেখ করলেও সম্মেলনে সব সরকারি ব্যাংক নিয়েই কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঝামেলা হয়ে গেছে। এগুলোর অবস্থা ভালো নয়। তবে সরকারের সঙ্গে পারফরম্যান্স চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকগুলো সম্প্রতি সক্ষমতা দেখাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করেন দেশে বেশি ব্যাংক হয়ে গেছে। এতে বাহাদুরির কিছু নেই। ১৬ কোটি মানুষের দেশে চাহিদা বেড়েছে, তাই ব্যাংক হয়েছে। জাতীয় আয়ে ভালো ভূমিকাও রাখছে ব্যাংকগুলো।’
বেসিক ব্যাংকে দুর্নীতি ও সোনালী ব্যাংকে ‘ডাকাতি’র কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পোষাতে যথেষ্ট সময় লাগছে বলে মন্তব্য করেন মুহিত। তিনি বলেন, ব্যাংক পরিচালনা করতে বাজেটের ওপর চাপ পড়ে। তবে সেই চাপটা অন্তত জনতা ব্যাংক এবার দেয়নি।
তিন বছরের জন্য বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ঋণ বিতরণে অনিয়মের সঙ্গে গোটা পর্ষদকেই দায়ী করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও আবদুল হাইকে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ দেওয়া হয়। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামকে একইভাবে দুই দফা নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রের সম্পদ সুরক্ষা, অপচয় ও দুর্নীতি রোধে ব্যাংকারদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান। এ জন্য তিনি তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের কথাও বলেন। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের চেয়ে যন্ত্রকে আমি এখন বেশি বিশ্বাস করি।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর যথেষ্ট স্বাধীনতা থাকলেও তা তারা ব্যবহার করেন না বলে ধারণা আবদুল মান্নানের। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, ব্যাংকগুলো স্বাধীনতা প্রয়োগে ভয় পায়।’ কিসের ভয় বা কেন ভয়, তা অবশ্য খোলাসা করে বলেননি প্রতিমন্ত্রী।
অন্যবারের তুলনায় এবার ভালো মুনাফা অর্জন করেছে বলে জনতা ব্যাংককে ধন্যবাদ দিয়েও কিছু প্রশ্ন তোলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম। বলেন, ‘আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আরও ভালো করতে হবে।’
রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের চিত্র সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘মুনাফা ঘোষণা করে দিচ্ছেন, আগামী বছর যদি খেলাপি হয়ে যায় বা অবলোপন করতে হয়, তখন কিন্তু এই মুনাফা মূল্যহীন হয়ে যাবে।’
মানসম্পন্ন ঋণ দেওয়া এবং ঋণ বিতরণে কাঠামোগত সংস্কারের পরামর্শ এই সচিবের। তিনি বলেন, ‘অনেক করপোরেট কোম্পানির ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা কমে গেছে, অর্থাৎ সম্প্রসারণের দিকে যেতে পারছে না। সুতরাং, তেলা মাথায় আর কত তেল দেওয়া?’
আসলাম আলম চান জনতা ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের (এসএমই) শিল্পে ঋণ দিতে বেশি মনোযোগী হোক। করপোরেট কোম্পানির তুলনায় এসএমই থেকে ঋণ আদায় সহজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করপোরেটদের আপনারা বাগে আনতে পারেন না, তারাই বরং বাগে আনেন আপনাদের।’
অন্যদিকে টাকা আদায়ে মামলার পর আইনজীবী নিয়োগ করেই খালাস না হওয়ার পরামর্শ দেন আসলাম আলম। বলেন, ‘নজরদারি না করলে আইনজীবীর একার পক্ষে ব্যাংকের পক্ষে রায় আনা সম্ভব না।’
জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুস সালাম জানান, রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে জনতা ব্যাংকই সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা (১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা) অর্জন করেছে। এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বর্তমানে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যেখানে অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এই হার গড়ে ২০ শতাংশের বেশি।
এ ছাড়া ২০১৪ সালের লোকসানি শাখা ৬০ থেকে ২০১৫ সালে ৩৪টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে এবং একই সময়ে অনলাইন শাখা ১৭৪ থেকে ৩১৯টিতে উন্নীত করা হয়েছে বলে জানান জনতা ব্যাংকের এমডি।