ব্যাংকের নিরীক্ষা বিভাগ কাজে স্বাধীন নয়

কোনো ব্যাংকের ঋণে অনিয়ম হলে তা প্রথমে নিরীক্ষা বিভাগের নজরে আসে। তবে ব্যাংকের নিরীক্ষা বিভাগ মূলত অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন (আইসিসি) বিভাগের অধীনে। আবার আইসিসি বিভাগ কাজ করছে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অধীনে। ফলে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাশ কাটিয়ে অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মের খোঁজ করতে পারছে না ব্যাংকের নিরীক্ষা বিভাগ।
‘ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় ব্যাংক কর্মকর্তারা এসব মতামত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
কর্মশালায় মূল গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে বিআইবিএমের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ছিদ্দিকী বলেন, ব্যাংকের আইসিসি, নিরীক্ষা বিভাগ আগে পর্ষদের অধীনে ছিল। তবে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর তা পরিবর্তন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অধীনে আনা হয়েছে। এতে ব্যাংকের নিরীক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, পরিবর্তন হওয়া নীতিমালায় আবারও পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে।
রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইসিসির গুরুত্ব অনেক। আইসিসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। ব্যাংকের উদ্যোক্তারা তো ৪০০ কোটি টাকা দিচ্ছেন। বাকি অর্থ আমানতকারীদের। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
আইসিসিকে তৃতীয় নয়ন উল্লেখ করে রাজী হাসান বলেন, ‘ব্যাংকে আইসিসি, পর্ষদ, নিরীক্ষা কমিটি কী করবে, তার সীমারেখা দেওয়া আছে। এরপরও হতাশার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় বাইরের লোকেরা উপস্থিত থাকছেন। আমাদের তদন্তে এসব ধরাও পড়ছে। ব্যাংক খাতের জন্য এটা ভালো খবর নয়। ছোট একটি শাখা থেকে তিন হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যাওয়ায় আইসিসির ব্যর্থতা ছিল।’
অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, সঠিকভাবে ব্যাংক পরিচালনা করতে নিরীক্ষা বিভাগকে অবশ্যই স্বাধীন হতে হবে। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অধীনে নিরীক্ষা বিভাগ কখনোই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। এ জন্য ব্যাংকের নিরীক্ষা বিভাগকে সরাসরি পরিচালনা পর্ষদের অধীনে রাখার দাবি জানান আলোচকেরা।
প্যানেল আলোচনায় প্রাইম ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন আহমাদ বলেন, ব্যাংকের নিরীক্ষা বিভাগকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। আইসিসি বিভাগের ওপর যাতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রভাব না ফেলতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এতেই ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র বের হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, ব্যাংকের স্বচ্ছতার স্বার্থে নিরীক্ষা প্রতিবেদন সরাসরি পর্ষদে আসা উচিত। তাহলে পরিচালনা পর্ষদ সব তথ্য পাবে, যা একটি ব্যাংককে সঠিকভাবে চলতে সহায়তা করবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা, নিরীক্ষা কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদকে নিজের দায়িত্ব নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। এর ফলে সবার লক্ষ্য অর্জন হবে ও ব্যাংক খাত ভালোভাবে চলবে।
একই সংস্থার আরেক সুপারনিউমারি অধ্যাপক মো. ইয়াসিন আলী বলেন, ‘আমি প্রাইম ব্যাংকে দায়িত্বে থাকাকালে তিনটি বড় অনিয়ম হয়েছিল। এ সময় নিরীক্ষা বিভাগকে দায়ী করা হলো। অথচ তারাই তো অনিয়ম খুঁজে বের করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, সারা দেশে সাড়ে ১২ হাজার ব্যাংক শাখা আছে। ৭০০ লোকবল নিয়ে সব শাখা দেখা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব না। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজেকেই ঠিক রাখতে হবে।