ব্যাংক হিসাবের টাকার ওপর আবগারি শুল্ক বাড়তে পারে

  • ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতে আবগারি শুল্ক অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

  • পোলট্রি খাতে করের বোঝা বাড়তে পারে।

  • বাজেটের দিন মজুতধারী নজরে থাকবে।

আসছে বাজেট ২০২২–২৩

ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়তে পারে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বড় আমানতকারীদের গচ্ছিত টাকায় আবগারি শুল্ক হার বাড়ানোর ঘোষণা থাকতে পারে। যেসব ব্যাংক হিসাবধারীর স্থিতিতে ১০ লাখ টাকার বেশি থাকবে, তাঁদের আগের চেয়ে বেশি টাকা শুল্ক দিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেট ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে।

বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো আবগারি শুল্ক নেই। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক লাখ টাকার সীমা যদি একবার স্পর্শ করে, তাহলেই আবগারি শুল্ক দিতে হয়। একাধিকবার স্পর্শ করলেও একবারই আবগারি শুল্ক কাটা হয়। কোনো হিসাবে এক লাখ টাকার কম থাকলে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হয় না।

১০ লাখ টাকার বেশি কোনো ব্যাংক হিসাবে থাকলে সে ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে আগামী বাজেটে।

বর্তমানে পাঁচ স্তরে (টাকার অঙ্কের সীমা) আবগারি শুল্ক বসে। কোনো হিসাবধারীর হিসাবে বছরে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা থাকলে ১৫০ টাকা। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এই দুই স্তরে কোনো পরিবর্তন আসছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক হিসাবে এখন ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত তিন হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আগামী অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা করা হতে পারে। আর ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার আবগারি শুল্কের বদলে ১৮ হাজার টাকা করা হতে পারে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকা বা তার বেশি থাকলে বর্তমানে ৪০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়। সেটি বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরে ৪৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।

দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষ ব্যাংকে থাকা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত কম টাকার হিসাবধারীদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি বেশি টাকার হিসাবধারীদের কাছ থেকে বেশি আবগারি শুল্ক আদায় করতে চায় সরকার।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আবগারি শুল্ক বাড়ানো ঠিক হবে না। আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেলবে। ব্যাংকে টাকা রাখা অপরাধ নয়। অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের সঞ্চয় বাড়ানো দরকার। আবগারি শুল্ক বাড়ানো অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে কোটি টাকার বেশি জমা আছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এক লাখের মতো। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস শেষে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো আবগারি শুল্ক আদায় হয়।

ব্যাংকে গচ্ছিত টাকায় আবগারি শুল্ক বসানো সাধারণত গ্রাহকের কাছে অজনপ্রিয় হয়। তাই আবগারি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া সাপেক্ষে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় আবগারি শুল্ক বাড়ানোর খসড়া চূড়ান্ত করে রেখেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা ও বিমান টিকিট কেনা, এই দুই খাতের ওপর আবগারি শুল্ক বসে।

পোলট্রি খাতের করের বোঝা বাড়ছে

আগামী অর্থবছর থেকে পোলট্রি খাতের করমুক্ত আয়সীমা কমানো হতে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম ২০ লাখ টাকার জন্য পোলট্রি খাতের বিনিয়োগকারীদের কোনো কর দিতে হয় না। ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার (পরের ১০ লাখ টাকা) ওপর ৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর বসে। কিন্তু আগামী বাজেটে পোলট্রি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা দুশ্চিন্তার খবর আসতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পোলট্রি খাতের বার্ষিক করমুক্ত সীমা ১০ লাখে নামিয়ে আনা হতে পারে। পরের ১০ লাখ টাকার ৫ শতাংশ; ২০-৩০ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ১৫ শতাংশ কর বসতে পারে।

এদিকে কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। মামলার কারণে আটকে যাওয়া টাকা আদায়ে উপকমিশনার এবং তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নতুন করে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের নিকট রাজস্ব পাওনা থাকলে মামলায় যদি এনবিআর জেতে, তাহলে ওই টাকা আদায়ে ওই প্রতিষ্ঠানের গ্যাস, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা কর কর্মকর্তাদের দেওয়া হতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, প্রাথমিক মামলায় এনবিআর জিতলেও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে উচ্চ আদালতে মামলা করে রাজস্ব আটকে রাখেন।

বাজেটের দিন প্রস্তাবিত হারেই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়

গতকাল বুধবার এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের আদেশে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, বাজেট পেশের দিন পণ্য খালাস বা সেবা গ্রহণের সময় বাজেটে প্রস্তাবিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করতে হবে। এ ছাড়া যেসব পণ্য বা সেবায় নতুন করে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক কিংবা আবগারি শুল্ক আরোপ কিংবা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হবে, সেসব পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মজুতের হিসাব রাখতে হবে।