ভালো তার কেন দরকার

.
.

‘আপনার কোন তার লাগবে তা কন, দোকানে সব ধরনের মাল পাবেন। বাজারে ঘুরলে সব ইলেকট্রিক বা হার্ডওয়্যারের দোকানে ৩০ রকমেরও বেশি তার পাবেন। বিআরবি, প্যারাডাইজ, ট্রান্সটেক, বিবিএস, আরআর, সুপারস্টার, পলি, ইস্টার্ন, সুপারসাইন—কয়টা হইল? ’ কারওয়ান বাজারের এক ইলেকট্রনিকস দোকানের তার বিক্রেতা এভাবেই বলে যাচ্ছিলেন ভবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভালো মানের বৈদ্যুতিক তারের কথা।
মারাত্মক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াতে চাই ভালো মানের তার। তাই ভালো তার চেনা জরুরি। সাধারণত তার কেনার সময় অনেকেই বাজারে গিয়ে বলেন, তার দেন। হার্ডওয়্যার বা ইলেকট্রিক দোকানদার তখন সামনে অনেক ব্র্যান্ডের তার এগিয়ে দেন। অনেক সময় আবার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বা ইলেকট্রিশিয়ানের পরামর্শের ওপর নির্ভর করে কিনে ফেলেন দরকারি তার।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, শহর, শহরতলি বা উপশহর এলাকায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়। নিম্নমানের তার ব্যবহারের কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। অনেক সময় বৈদ্যুতিক ওভার লোড ও শর্টসার্কিটের কারণে আগুন ধরে। কারখানা বা কারখানা এলাকায় ৫০ শতাংশ আগুনের সূত্রপাত হয় বৈদ্যুতিক কারণে। এ ছাড়া সারা দেশে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আগুনের সূত্রপাত হয় এই বৈদ্যুতিক কারণেই।
মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘বাজারে অনেক ধরনের তার পাওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যে নিম্নমানের তারই বেশি। বাড়ি বানাতে গেলে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষার জন্য নিম্নমানের তার ব্যবহার করা ঠিক না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে উন্নতমানের তার ব্যবহার করা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত জরুরি।’
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) একজন প্রকৌশলী জানান, ঢাকায় বাসা-বাড়ির গ্রাহকেরা সাধারণত সিঙ্গেল ফেজ লাইন ব্যবহার করেন। এ ধরনের বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষেত্রে নিম্নমানের তার ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। এতে গ্রাহকের ঝুঁকি অনেক বেশি। কোনো ধরনের জোড়াতালি দেওয়া তার দিয়ে লাইন নেওয়া যাবে না। সাধারণত বাসা-বাড়িতে ইস্টার্ন কেবল, বিআরবি কেবল প্রভৃতি ব্যবহার করতে দেখা যায়।কেব্ল নির্মাতা বিবিএস কেবলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদার বলেন, ‘বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম হিসেবে তার স্পর্শকাতর একটি বিষয়। ভালো তার বেছে নেওয়া এ জন্য নিরাপদ। তা না হলে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। তারের ইনসুলেশন বেশি হতে হবে এবং যাতে শর্টসার্কিটে তার গলে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটাতে পারে সে জন্য নিম্নমানের তার ব্যবহার করা যাবে না। তারের খরচ কিন্তু খুব বেশি না। ভবন নির্মাণের মোট খরচের এক থেকে দুই শতাংশ তারের। তাই এ ক্ষেত্রে আপস করা ঠিক না।’
ভালো মানের তার সম্পর্কে বিআরবি কেবলসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিম্নমানের তার ব্যবহার করলে গ্রাহকের ক্ষতি বেশি আর ঝুঁকির মাত্রাও বেশি থাকে। শটসার্কিট থেকে মারাত্মক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে কিংবা তারের ইনসুলেশন গলে যেতে পারে। ইনসুলেশন ভালো মানের না হলে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনে ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়াও বিদ্যুতের বিলও বেশি হতে পারে। তাই ভালো তার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক তার শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএমএমএ) সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে তার উৎপাদনকারী হিসেবে বিইএমএমএর নিবন্ধিত ৬০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।’
মোশারফ হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক তারের বাজার অনেক বড়। সাত হাজার কোটি টাকার বাজার এটি। বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ার কারণে বৈদ্যুতিক তারের বাজারও বাড়ছে। ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগোচ্ছে এ শিল্পটি। এই শিল্পের সম্ভাবনার ক্ষেত্র অনেক। সরকারকে এই ক্ষেত্রটিতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় উৎপাদন যাতে বাড়ে এবং আন্তর্জাতিক পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে সেই সুবিধা বাড়াতে হবে। কাঁচামাল আরও সহজলভ্য করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে দরকারি সব ধরনের কেব্ল বা তার সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোই যথেষ্ট। এখানে সব ধরনের তারই তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তার বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে।