ভূমি উন্নয়ন কর বেড়েছে

দেশের সব ধরনের ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) বাড়িয়েছে সরকার। ২০ বছর পর সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া কোর্ট ফি, নোটিশ জারি ফি, রেকর্ড সংশোধন বা হালনাগাদকরণ ফি এবং নামজারি খতিয়ান সরবরাহের ফি-ও বাড়ানো হয়েছে।
সরকার এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি গেজেট জারি করেছে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গ্রামীণ বা পৌর যে এলাকাতেই কৃষি জমি থাক না কেন ২৫ বিঘা পর্যন্ত (৮ দশমিক ২৫ একর) ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। এ মওকুফের আওতায় আসবে আখ ও লবণ চাষের জমি এবং কৃষকের পুকুর (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ ছাড়া)।
তবে কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে প্রতি শতকের জন্য বছরে দুই টাকা হারে কর দিতে হবে। চা, কফি, রাবার, ফুল বা ফলের বাগান এবং বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য ও চিংড়ি চাষ, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খামার ইত্যাদি বিশেষ কাজে যেকোনো পরিমাণ ভূমি ব্যবহার করলেও শতকপ্রতি দুই টাকা হারে কর দিতে হবে।
শুধু ভূমি উন্নয়ন কর নয়, জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন ফি-ও বাড়ানো হয়েছে। নামজারি, জমাভাগ ও জমা একত্রীকরণ বাবদ বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করে সরকার সর্বশেষ পরিপত্র জারি করেছিল ২০১০ সালে। সেটি এখন বাতিল। নতুন নিয়মে নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। এভাবে নোটিশ জারি ফি দুই টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা, প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ ফি ৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক, শিল্প ও আবাসিক শ্রেণি: এই তিন শ্রেণিতে ছয় ধাপে কর দিতে হবে। আগে বাণিজ্যিক ও শিল্প এক থাকলেও এবার শিল্পকে আলাদা করা হয়েছে।
‘ক’ ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা জমির প্রতি শতকের কর ১২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা, আবাসিক জমির কর ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে।
‘খ’ ধাপে রয়েছে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির কর বছরে প্রতি শতকে ২৫০ টাকা, শিল্পকাজে ১৫০ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির ক্ষেত্রে ৫০ টাকা।
‘গ’ ধাপে রয়েছে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নোয়াখালী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর ও পটুয়াখালী জেলা সদরের পৌর এলাকা। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ, খুলনার ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলাতলা ইউনিয়ন ও দামোদর ইউনিয়নের মশিখালী; নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, কুমিল্লার লাকসাম ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ; ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর এলাকা; নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরববাজার পৌর এলাকা। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক কাজের কর ১২৫ থেকে বাড়িয়ে ২০০, শিল্প কাজে ১২৫ এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে ২২ থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে।
‘ঘ’ ধাপে রয়েছে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি, চাটখিল ও বসুরহাট; লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর; পাবনা জেলার ঈশ্বরদী; বগুড়া জেলার শান্তাহার ও শেরপুর, জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর এবং যশোর জেলার অভয়নগর পৌরসভা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নও রয়েছে এই ধাপে। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক কাজের জন্য কর প্রতি শতকে ১০০ টাকা, শিল্প কাজে ৭৫ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ২০ টাকা দিতে হবে। আগে ছিল বাণিজ্যিক ও শিল্পের জন্য ২২ টাকা এবং আবাসিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সাত টাকা।
‘ঙ’ ধাপে বাণিজ্যিক কাজে কর ৬০ টাকা, শিল্প কাজে ৪০ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ১৫ টাকা। আগে বাণিজ্যিক ও শিল্পে ছিল শতক প্রতি ১৭ টাকা এবং আবাসিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ছয় টাকা।
‘চ’ ধাপে রয়েছে পৌর এলাকা ঘোষিত হয়নি এমন এলাকাগুলো, যেখানে বাণিজ্যিক কাজের জমির ওপর প্রতি শতকে কর ৪০ টাকা, শিল্প কাজে ৩০ টাকা এবং আবাসিক ও অন্যান্য কাজের জমিতে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এই হার ছিল বাণিজ্যিক ও শিল্পে ১৫ টাকা ও আবাসিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা।
যোগাযোগ করলে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে ভূমি উন্নয়ন কর হার খুবই কম, একবারেই নামমাত্র। সম্প্রতি যৌক্তিকভাবেই তা বাড়ানো হয়েছে।’ ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, অনেক সময় মানুষ ভুলেই যায় যে, ভূমি উন্নয়ন কর বলতে কিছু একটা আছে। এই প্রবণতা থেকে মানুষকে বেরিয়ে আসতে হবে।