মানব উন্নয়নে মধ্যম মানে বাংলাদেশ

গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে। আর তারই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সুইডেনের স্টকহোম থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৬-তে একধাপ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
বিশ্বের ১৮৮টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। আগের বছর (২০১৪) বাংলাদেশ ১৪০তম অবস্থানে ছিল। এ বছর বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে ঘানা ও জাম্বিয়া। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ নেপাল ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভারত ও ভুটান।
সূচকের বিভিন্ন মানদণ্ডে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সূচকে অন্তর্ভুক্ত ১৮৮ দেশকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে রয়েছে সুউচ্চ মানব উন্নয়ন, উচ্চ মানব উন্নয়ন, মধ্যম মানব উন্নয়ন ও নিম্ন মানব উন্নয়ন। এ চার ভাগে বিভক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মধ্যম মানব উন্নয়নভুক্ত দেশের কাতারে। এ ভাগে রয়েছে মোট ৪১টি দেশ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। মানব উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৭৭তম অবস্থানে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার পরে রয়েছে যথাক্রমে মালদ্বীপ (১০৫), ভারত (১৩১), ভুটান (১৩২), বাংলাদেশ (১৩৯), নেপাল (১৪৪), পাকিস্তান (১৪৭) ও আফগানিস্তান (১৬৯)।
ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচক নির্ণয়ে মূল মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল, শিক্ষা ও মাথাপিছু জাতীয় আয়। যেসব দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নত ও মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশ এ সূচকের তালিকার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নিশীথ সূর্যের দেশ হিসেবে পরিচিত নরওয়ে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও ডেনমার্ক।
ইউএনডিপির এবারের মানব উন্নয়ন সূচকের মূল প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানব উন্নয়ন’। ১৯৯০ সাল থেকে এ সূচক তৈরি করে আসছে ইউএনডিপি। এবারের সূচকসংক্রান্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মানব উন্নয়নে বেশ উন্নতি হলেও সমতা নিশ্চিত হয়নি। ফলে এখনো সমাজে বিপুলসংখ্যক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ রয়ে গেছে।
বৈশ্বিক এ প্রতিবেদনটিতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষাসহ সূচকে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাম এসেছে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও বিকাশের মতো প্রতিষ্ঠানের। সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচিরও প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ১৩ দশমিক ৬ বছর বেড়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকের এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছরে। আগের বছরে যা ছিল ৭১ দশমিক ৬ বছর। ১৯৯০ থেকে ২০১৫—এ সময়কালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় প্রায় ১৬০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে (পিপিপি) মাথাপিছু এ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪১ ডলারে।
মানব উন্নয়ন সূচকে অন্তর্ভুক্ত মানদণ্ডের বাইরে ‘ভালো থাকার ধারণা’ নামে আলাদা সম্পূরক সূচকও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বসবাস ও নিরাপত্তার মান এবং সরকার ও বিচারব্যবস্থার ওপর জনসাধারণের কেমন আস্থা রয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষার মান নিয়ে তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ৬১ শতাংশ মানুষ। আর নিরাপত্তার দিক থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ৭৬ শতাংশ মানুষ সরকার ও বিচারব্যবস্থার ওপর তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।