মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা

শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) কর্মসূচি (স্কিম) অনুমোদন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল কর্মসূচিটি অনুমোদনের ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণ কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। আইন অনুযায়ী ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। বিদ্যমান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এই প্রক্রিয়াভুক্ত হবে। তারই অংশ হিসেবে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ পরিণত হবে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে।
বর্তমানে ডিএসই ও সিএসই অলাভজনক কোম্পানি। এদের মুনাফা বণ্টন করা যায় না। সে কারণে বছর বছর মুনাফা সংস্থার নিজস্ব হিসাবে জমা হয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ফলে স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে। আর বছর শেষে শেয়ারধারীরা লভ্যাংশ পাবেন বলে বিএসইসি জানিয়েছে। সে সঙ্গে এক্সচেঞ্জের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি গতিশীলতা বাড়বে বলেও মনে করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
চলতি বছরের ২ মে এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন-২০১৩ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী, এত দিন ধরে ডিমিউচুয়ালাইজেশন কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কাজ চলে। এখন থেকে শুরু হবে দৃশ্যত পৃথক্করণের কাজ।
বিএসইসি জানিয়েছে, ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ হবে ১৩ সদস্যের। পর্ষদ সদস্যদের মেয়াদকাল হবে তিন বছর। এর মধ্যে সাতজন হবে স্বতন্ত্র পরিচালক, শেয়ারধারী পরিচালক হতে পারবেন সর্বোচ্চ পাঁচজন, আর ভোটাধিকারের ক্ষমতাসহ এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও পরিচালক হবেন। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্য থেকে সভাপতি নির্বাচিত হবেন।
এ ছাড়া শেয়ারধারী পাঁচ পরিচালকের মধ্যে ন্যূনতম একজন কৌশলগত (স্ট্র্যাটেজিক) বিনিয়োগকারী রাখতে হবে। যত দিন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পাওয়া যাবে না, তত দিন ওই পদটি শূন্য থাকবে। এর ফলে বর্তমান সদস্যদের মধ্য থেকে মাত্র চারজন পরিচালক হওয়ার সুযোগ পাবেন।
যদিও ডিমিউচুয়ালাইজেশন-সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানিতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ১৫ জনের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের সেই প্রস্তাবকে বিবেচনায় নেয়নি বিএসইসি। বর্তমানে ডিএসইর পর্ষদ সদস্য ২৫ জন আর সিএসইর ২৪ জন।
বিএসইসি জানিয়েছে, ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জে ‘চিফ রেগুলেটরি অফিসার’ এর একটি পদ সৃষ্টি করতে হবে। যার তত্ত্বাবধানে স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ পরিচালিত হবে।
অনুমোদিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ডিএসইর হবে এক হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি। অনুমোদিত মূলধন হবে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
পরিশোধিত মূলধন ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ শেয়ার দ্বারা বিভাজিত থাকবে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু হবে ১০ টাকা। প্রাথমিক শেয়ারধারী হিসেবে ২৫০ সদস্যের মধ্যে এসব শেয়ার বণ্টন করা হবে। এতে প্রত্যেক সদস্য পাবেন ৭২ লাখ ১৫ হাজার ১০৬টি শেয়ার।
সিএসই হবে ৬৩৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি। ৬৩ কোটি ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৮৪০টি শেয়ারে যা বিভাজিত হবে। প্রাথমিক শেয়ারধারী হিসেবে সিএসইর ১৪৮ সদস্যের মধ্যে এসব শেয়ার বণ্টন হবে। প্রত্যেক সদস্য পাবেন ৪২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩০টি শেয়ার। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা।
দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রত্যেক সদস্যের বিপরীতে বরাদ্দ করা শেয়ারের ৬০ শতাংশ ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করা হবে। পরবর্তী সময়ে এসব শেয়ার বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হবে।
প্রথম ৩০ দিনের মধ্যে করণীয়: এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, স্কিম অনুমোদন পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে তা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট, গেজেট আকারে ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশ করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করতে হবে। ওই সভায় অনুমোদিত কর্মসূচি, সংঘস্মারক ও সংঘবিধির পরিবর্তন এবং ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জের প্রথম পরিচালনা পর্ষদের তালিকা বিশেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
পাশাপাশি প্রাথমিক শেয়ারধারী অর্থাৎ স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান সদস্যরা প্রত্যেকে একটি করে শেয়ার সনদ ও লেনদেনের জন্য ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) পাবে।
এ ছাড়া আইনের বিধান অনুযায়ী, স্কিম অনুমোদন পাওয়ার দিন থেকে সর্বোচ্চ ৫১ দিনের মধ্যে বিদ্যমান স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জে পরিণত হবে।
বিএসইসির একাধিক শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ডিএসই শেয়ার দ্বারা বিভাজিত কোম্পানি। এ কারণে তাদের নতুন করে পুনর্নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। তাই সাধারণ সভার পর থেকেই এটি ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জ হিসেবে পরিগণিত হবে। আর সিএসই বর্তমানে ‘লিমিটেড বাই গ্যারান্টি’ দিয়ে গঠিত কোম্পানি। তাই এটি পুনর্নিবন্ধন নিতে হবে। ফলে এটির ডিমিউচুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জে পরিণত হতে সর্বোচ্চ ৫১ দিন সময় পাবে।