মিডল্যান্ড ব্যাংকের যত সেবা

২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা ৯ ব্যাংকের একটি মিডল্যান্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও সময়ের ব্যবধানে কেউ কেউ সেই বিতর্ক কাটিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটি মিডল্যান্ড ব্যাংক। ৭ বছরে ব্যাংকটি গ্রাহক পরিধি খুব বেশি বাড়াতে না পারলেও করপোরেট সুশাসনে অগ্রগতি দেখিয়েছে। ব্যাংকটির স্লোগান হচ্ছে, ‘ব্যাংক ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাংক।

এ জন্য ব্যাংকটির রয়েছে নানা ধরনের আমানত ও ঋণপণ্য। প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, কাদের জন্য কত ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে ব্যাংকটির। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে এমডিবি স্কুল সেভার, যা ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য। মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে এ হিসাব খোলা যায়। কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ সেভার, যা ১৮ বছরে বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা মাত্র ৫০০ টাকা জমা দিয়ে খুলতে পারেন।

প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী সেভিংস। বিদেশে বসে প্রবাসীদের হিসাব ও আমানত রাখার জন্য এমডিবি ডিজিটাল প্রবাসী সেভিংস। এ ছাড়া এমডিবি ইন্টারেস্ট ফার্স্ট, ডিজিটাল সেভিংস, রিটেইল ব্যাংকিং, সুপার সেভার তো রয়েছেই।

এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদি আমানত পণ্যও রয়েছে ব্যাংকটির। এতে প্রতি মাসে টাকা জমা দিয়ে মেয়াদ শেষে ভালো মুনাফাসহ টাকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এমডিবি ফ্যামিলি সাপোর্ট, ডাবল বেনিফিট, শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প, সুপার মান্থলি সেভিংস, ট্রাভেলার্স সেভিংস স্কিম, মিলেনিয়ার সেভিংস স্কিম, এমডিবি কোটিপতি।

ব্যাংকটির এসব পণ্যের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করছে। আর ঋণ দিয়েছে ৩ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ গ্রাহক হিসাব খুলেছেন।

>মিডল্যান্ড ব্যাংক
কার্যক্রম শুরু: ২০ মার্চ ২০১৩
আমানত: ৩,৭৬৭ কোটি টাকা
ঋণ: ৩,১৬৫ কোটি টাকা
শাখা: ৩৩ কর্মী: ৬৩৬ জন

ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকটির রয়েছে নানা ঋণসেবা পণ্যও। খুচরা ঋণের মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিগত, গাড়ি কেনা, বাড়ি কেনা, সিকিউরড ঋণ অন্যতম। রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য আইটি উদ্যোগ, কৃষি, এসএমই, গ্রিন ঋণ, নারী উদ্যোগসহ আরও নানা ঋণপণ্য। ব্যাংকটির রয়েছে প্রি পেইড কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধাও।

গ্রাহকদের সেবা প্রদানের ধারাবাহিকতায় ব্যাংকটি ইতিমধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ সেবা ‘মিডল্যান্ড অনলাইন’ চালু করেছে। এর ফলে গ্রাহকেরা এখন যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে বসে তাঁদের ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন। আর শুরু থেকে গ্রাহকদের মোবাইল এসএমএস অ্যালার্ট সার্ভিস পাচ্ছেন। এর ফলে গ্রাহকেরা হিসাবের লেনদেনের বিষয়টি তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানতে পারছেন। সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংকটির রয়েছে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার। ১৬৫৯৬ নম্বরে ফোন করে গ্রাহকেরা যেকোনো সময় প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং তথ্য জানতে পারছেন।

মিডল্যান্ড ব্যাংক সম্প্রতি মোবাইলে আর্থিক সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এর ফলে এখন ব্যাংকটির যেকোনো গ্রাহক তাঁর হিসাব থেকে বিকাশ হিসাবে টাকা স্থানান্তর করতে পারছেন। এ ছাড়া সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে ব্যাংকটি, ফলে মিডল্যান্ড ব্যাংকের গ্রাহকেরা ‘একপে’ ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে সরকারের সকল পরিষেবার বিল দিতে পারবেন।

২০১৩ সালের ২০ মার্চ মিডল্যান্ড ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকটির রয়েছেন ৬৩৬ জন কর্মী। ১৮টি গ্রামীণ শাখাসহ মোট ৩৩টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ব্যাংকটি। আর সবার মাঝে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিকে চালু করেছে এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধা। ৪৭টি এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টারের মাধ্যমে ১৬ হাজার ১৬৩টি হিসাব খুলেছে, জমা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা আমানত। চলতি বছর শেষে ব্যাংকটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সংখ্যা ১০০টিতে উন্নীত করতে চায়।

সার্বিক বিষয়ে মিডল্যান্ড ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকেরাই ব্যাংকের প্রাণ। এ জন্য মিডল্যান্ড ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর ঝুঁকি মোকাবিলায় সেন্ট্রালাইজড (কেন্দ্রীভূত) ব্যাংকিং চালু করেছে। জরুরি যেকোনো সেবায় জন্য রয়েছে ২৪ ঘণ্টা গ্রাহক সেন্টার। আমাদের ঋণ বেশির ভাগই করপোরেট গ্রাহকদের, তবে এসএমই ও রিটেইল খাতে ঋণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’