মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা হবে মূল চ্যালেঞ্জ

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে; তা না হলে ভর্তুকি ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে দেশে। এই বাস্তবতায় সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই)। বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে অপ্রয়োজনীয় লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে হবে বলে মত দিয়েছে তারা।

এমসিসিআই বলেছে, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে; তা না হলে ভর্তুকি ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। আর মূল্যস্ফীতি মোকাবিলাই হবে আগামী দিনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাদের পূর্বাভাস, মে মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, তবে জুন মাসে তা কিছুটা কমে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে।

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এমসিসিআই এসব কথা বলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকলেও চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় আছে।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পাশাপাশি বেশ কিছু সূচকের পূর্বাভাস দিয়েছে এমসিসিআই। তারা বলছে, চলতি মে ও জুন মাসে দেশের রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে ৪৮২ কোটি ও ৪৯১ কোটি ডলার। একই সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭৭৯ কোটি ও ৭৮৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য থেকেই যাবে। আর এ সময়ে দেশে প্রবাসী আয় আসতে পারে যথাক্রমে ২০৬ ও ২১৬ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। মূলত এ সময়ে আমদানি ব্যয় অনেকটা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘাটতি বেড়েছে। এ সময়ে কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় ছিল। ফলে আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই বেড়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে সবখানেই অর্থনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। এ সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ, কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এতে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সুসংবাদ হলো, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে নিট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এ সময়ে দেশে এফডিআই এসেছে ১৬৭ কোটি ডলার। সামগ্রিক হিসাবেও এ সময় দেশে এফডিআই বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। তা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ করতে ইতস্তত করেন; কারণ, হিসেবে তাঁরা অনুন্নত অবকাঠামো ও জ্বালানি ঘাটতির মতো অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা, নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে ধারাবাহিকতার অভাব, শিল্প জমির স্বল্পতা, দুর্নীতি ও নিয়মের অস্বচ্ছ ও অসম প্রয়োগ ও প্রবিধানকে উল্লেখ করে থাকেন। আরও এফডিআই আকৃষ্ট করতে সরকারকে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় এসব বাধা দূর করার বিকল্প নেই।