মূসক নিয়েই যত আপত্তি

নতুন মূসক বা ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন কার্যকর হচ্ছে ১ জুলাই থেকে। তবে আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা কাটছেই না। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা মূসক রেয়াত বা হ্রাস করার দাবি করেই চলেছেন।
ঢাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় যেসব ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু-তিনজন ছাড়া প্রত্যেকেই মূসক রেয়াত বা হ্রাস করা নিয়ে কথা বলেছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি কন্টিনেন্টাল কুরিয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল ইমরান চিশতি বলেন, ‘ঢাকায় যানজট ঠেলে একটি ডকুমেন্ট বিলি করিয়ে পাওয়া যায় মাত্র ১৫ টাকা। তার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিলে ব্যবসায় আর কিছু থাকে না। তাই আমরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক পাঠাতে যথাক্রমে ১ হাজার ২০০ ও ৮০০ টাকা কর দিই আমরা। তারপর আবার ১৫ শতাংশ হারে মূসক দেওয়া কষ্টকর।’ তিনি বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে গত বছর ৮ লাখ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পরিচালক সজিবুল-আল-রাজীব বলেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় অনেক রিসোর্ট হয়েছে। এসব রিসোর্টের জন্য মূসক ১০ শতাংশের নিচে করা হলে তারা আরও বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারবে।
অবশ্য ছোট ছোট রিসোর্টের জন্য পাঁচ বছরের জন্য মূসক রেয়াত দাবি করেন ট্যুরিজম ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধি শাহদাৎ ফিরোজ সিকদার। তিনি আরও বলেন, পর্যটন এলাকার হোটেল-রিসোর্টে জুন-জুলাই মাসে ভালো ব্যবসা করে। অফ সিজনে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়াই কষ্টকর হয়ে যায়।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার ছোট ও মাঝারি আকারের রেস্তোরাঁকে মূসকের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানান। তাঁর মতে, সোনারগাঁওয়ের মতো বড় হোটেলের মূসক কমানোর প্রয়োজন নেই। তবে ছোট ছোট রেস্তোরাঁ থেকে ভ্যাট আদায় করা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ এসব রেস্তোরাঁয় নিম্ন আয়ের মানুষ খাওয়াদাওয়া করে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিসেস কোম্পানিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ আলম সরকার অবশ্য সব ধরনের কর অবকাশই দাবি করে বসলেন।
নতুন ভ্যাট আইনে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা উপকৃতই হবেন বলে মন্তব্য করেন এনবিআরের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, বছরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের জন্য কোনো ধরনের কর দিতে হবে না। আর ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেনের জন্য মাত্র ৩ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী যতটুকু মূল্য সংযোজন করবেন, তার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক দিতে হবে। বাকিটা তাঁরা রেয়াত পাবেন। প্রকৃতপক্ষে আড়াই থেকে তিন শতাংশ মূসক দিতে হবে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কেউ একে অপরের প্রতিপক্ষ নই। আমরা একত্র হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করব।’