রিটার্ন
যাঁদের টিআইএন লাগবেই
আপনি টিআইএন ছাড়া কিছু কাজ যেমন করতে পারবেন না, তেমনি কিছু সেবাও পাবেন না। কোন কোন কাজ বা সেবা পেতে টিআইএন লাগবে, তা দেখা যাক।
কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ছাড়া আপনি অনেক কাজ করতে পারবেন না। দেশের সামর্থ্যবান মানুষকে করের জালে আনতে কিছু কাজ বা সেবা নিতে টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেকেই জানেন না তাঁর টিআইএন নিতে হবে কি না। ফলে পদে পদে বিপত্তিতে পড়তে হয়। কারণ, টিআইএন ছাড়া অনেক কাজ যেমন করা যায় না, তেমনি অনেক সেবাও মেলে না। এতে ভোগান্তি বাড়ে। কোন কোন কাজ বা সেবা নিতে টিআইএন প্রয়োজন হয়, তা নিয়ে এবারের আয়োজন।
প্রতিবছরই বাজেটে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার তালিকায় নতুন নতুন খাত যুক্ত করা হয়। সর্বশেষ এবারের বাজেটেও বেশ কিছু সরকারি সেবা বা কাজের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্যে হলো দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া গ্রামে বা শহরে বাড়ির নকশা অনুমোদন নিতে টিআইএন লাগবে। অর্থাৎ টিআইএন না থাকলে এখন থেকে বাড়ির নকশার অনুমোদন মিলবে না। আবার সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিতেও টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এবার দেখা যাক, টিআইএন ছাড়া আর কী কী কাজ বা সেবা নেওয়া যাবে না। সার্বিকভাবে প্রায় ৪০ ধরনের কাজে টিআইএন লাগবে।
দুই বছর আগেই ব্যক্তি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ধরে নেওয়া হয়, যিনি নিজ বাড়ির জন্য বিদ্যুৎ-সংযোগ নেবেন, তিনি সামর্থ্যবান এবং তাঁর করযোগ্য আয় আছে।
এ ছাড়া কয়েক ধরনের ব্যবসা করতে টিআইএন লাগবে। যেমন মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন লাগবে। টিআইএন ছাড়া এসব ব্যবসা করা যাবে না।
বিশেষ কয়েক শ্রেণির পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীর টিআইএন থাকতেই হবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঋণপত্র স্থাপন; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান; জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন; মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক ও স্পনসর শেয়ারহোল্ডার; বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি; ড্রাগ লাইসেন্সধারী।
এ ছাড়া বরাবরের মতো জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে; বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; ক্রেডিট কার্ড থাকলে; বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন লাগবে।
এবার আসি চাকরিজীবীদের মধ্যে কাদের টিআইএন থাকতে হবে। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলেই টিআইএন লাগবে। এমনকি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি, তাঁদেরও কর শনাক্তকরণ সনদ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে টিআইএন।
কীভাবে টিআইএন নেবেন?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি ই-টিআইএন নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে <http://www.nbr.gov.bd> এই ঠিকানার ই-টিআইএন অপশনে গিয়ে ক্লিক করলেই ই-টিআইএন নেওয়ার পেজ পাওয়া যাবে। অবশ্য সরাসরি <https://incometax.gov.bd> ঠিকানায় গিয়েও ই-টিআইএন নেওয়ার একই পেজ পাওয়া যাবে। সেখানে আপনাকে প্রথমেই নির্ধারিত স্থানগুলো পূরণ করে নিবন্ধন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর জরুরি। তারপর রেজিস্ট্রার ক্লিক করলেই ই-টিআইএনের ফরম পাওয়া যাবে। ওই ফরম পূরণ করে জমা দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ই-মেইলে ১৩ সংখ্যার ই-টিআইএন পাঠিয়ে দেওয়া হবে।