রাষ্ট্রীয় কোষাগারে স্বশাসিত সংস্থার জমা ৫ গুণ কমল

২০২০-২১–এ জমা হয়েছিল ১৫,৫০০ কোটি টাকা। এবার হয়েছে ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা। বিপিসি ও পেট্রোবাংলা ছয় হাজার কোটি টাকা জমা দেয়নি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বশাসিত ৮টি সংস্থার কাছ থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ১৯ জুন পর্যন্ত টাকা জমা পড়েছে ৩১ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আর এক সপ্তাহ বাকি আছে। অথচ ৬ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের বাকি এখনো।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বশাসিত সংস্থার কাছ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ ৩৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা।

একদিকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংকট মেটাতে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে উচ্চ সুদে, অন্যদিকে স্বশাসিত সংস্থাগুলো ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রেখে মুনাফা অর্জন করছে। উদ্বৃত্ত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার জন্য ২০২০ সালে তাই আইন পাস করে সরকার। তার ভিত্তিতেই এ টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ জন্য আমাদের টাকা রাখতে হয়েছে।
নাজমুল আহসান, চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে আট সংস্থার মধ্যে চারটি তাদের অংশের পুরো টাকাই জমা দিয়েছে। তবে একটি সংস্থা কোনো টাকাই জমা দেয়নি। বাকি ৩টির মধ্যে একটি ১৬ শতাংশ, একটি ৩৩ শতাংশ ও আরেকটি ৬০ শতাংশ টাকা জমা দিয়েছে।

চলতি অর্থবছরে যে আটটি সংস্থাকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ওয়াসা, বেপজা ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এবার চারটি সংস্থা নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এর বাইরে প্রতিবারই থাকছে অবশ্য বিপিসি, পেট্রোবাংলা, পিডিবি ও আরইবি।

একক সংস্থা হিসেবে বিপিসি চলতি অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। সংস্থাটির জমা দেওয়ার কথা ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের গত জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বিপিসির কাছে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংস্থার পরিচালক (অর্থ) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই তহবিল সংকটে আছি আমরা। তাই বাকি চার হাজার কোটি টাকা দিতে পারিনি। অর্থ বিভাগকে তা জানিয়েছি।’

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল পেট্রোবাংলা থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই পেট্রোবাংলাও কোনো টাকা জমা দিতে পারেনি। এ সংস্থার কাছে স্থিতি ছিল ১৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।

টাকা দিতে না পারার কারণ জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ জন্য আমাদের টাকা রাখতে হয়েছে।’

এদিকে ৩ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা স্থিতি থেকে ১ হাজার কোটি টাকা দিতে বলা হয়েছিল পিডিবিকে। সংস্থাটি দিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাগুলোর নিজেদেরই দায়িত্ব হচ্ছে উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তারা গড়িমসি করে থাকে। চলতি অর্থবছরে অবশ্য লক্ষ্যমাত্রাই কমিয়ে ধরা হয়েছিল।