রূপপুরের অর্থ রাশিয়ায় পাঠাবে না বাংলাদেশ

গত রোববার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভায় এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপাতত অর্থ না পাঠানোর মত দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকার
ছবি: সংগৃহীত

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কোনো অর্থ আপাতত রাশিয়ায় পাঠাবে না বাংলাদেশ। গত রোববার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় অর্থ পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো অর্থ না পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ও তাতে সম্মতি দেয়। এ মুহূর্তে অর্থ না পাঠালেও তার জন্য বাংলাদেশকে কোনো জরিমানা বা বিলম্ব মাশুল গুনতে হবে না। কারণ, রাশিয়ার যে ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ অর্থ লেনদেন করে, সেই রুশ ব্যাংক তাদের সঙ্গে লেনদেন থেকে আপাতত বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশকে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বেশ কয়েকটি রুশ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। আবার বৈশ্বিক আন্তব্যাংক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম দ্য সোসাইটি ফর ওয়াল্ড৴ওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফটও রাশিয়ার বেশ কিছু ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন স্থগিত করে। এর ফলে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে বড় ও একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পটির অর্থ লেনদেন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

এ প্রকল্পের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ও রাশিয়ার ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের (ভিইবি) মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে। ভিইবি ব্যাংকটি ১২ মার্চ থেকে সুইফটের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুইফট–ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠায় রুশ ব্যাংক ভিইবি। ওই বার্তায় আপাতত অর্থ লেনদেন না করার জন্য বলা হয়। ব্যাংকটি এ কথাও বলেছে, বাংলাদেশ যদি রূপপুর প্রকল্পের অর্থ বিলম্বে পাঠায়, তাহলেও কোনো বিলম্ব মাশুল দিতে হবে না।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের নেতৃত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। এ প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে প্রায় ২২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। আর ঋণসহায়তা হিসেবে দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা। এ প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ সরকারের সঙ্গে সরকারের বা জিটুজি পদ্ধতিতে লেনদেন হচ্ছে। এই অংশের লেনদেন নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বাকি ১০ শতাংশ অথ৴ বিভিন্ন মেয়াদে অগ্রিম পাঠাতে হয়।

গত রোববার প্রকল্পটির অর্থ লেনদেন বিষয়ে সভার আহ্বান করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ–সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসসি অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ান কর্তৃপক্ষকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের একটি দফা সংশোধনের লক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, চুক্তিতে অগ্রিম টাকা পাঠানোর যে দফা রয়েছে, সেটি পরিবর্তনের জন্যই সভাটি ডাকা হয়েছিল। এখনই টাকা পাঠানো হবে না, এ জন্য দফাটি পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।