রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরামর্শ নিতেই খরচ হবে প্রকল্পের ৭৭% টাকা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পারমাণবিক নিরাপত্তা তদারকির জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরামর্শক সেবার জন্য ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭৭ শতাংশের বেশি। মূলত রাশিয়া ও ভারত থেকে পরামর্শক এনে এই সেবা নেওয়া হবে। 

পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নে নেওয়া নতুন এই প্রকল্পে অর্থ খরচের এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠছে। 

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নেওয়া এই প্রকল্প ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে। দেশের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর লাইসেন্সিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে থাকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। 

এই প্রকল্পের খরচভিত্তিক বিভাজনে দেখা গেছে, পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল শেখার জন্য রাশিয়া থেকে যে পরামর্শসেবা নেওয়া হবে, এর মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। আর ভারতীয় পরামর্শসেবার খরচ প্রায় ৬২ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী ছয় বছরে ১৫০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। এ জন্য খরচ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা। অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশভ্রমণ খাতে আছে ১২ কোটি টাকা। 

>পারমাণবিক নিরাপত্তা তদারকির জন্য নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো তৈরি করতে ১,৭১০ কোটি টাকার প্রকল্প যাচ্ছে একনেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাহানা আফরোজ গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন আমরা ‘‘নন নিউক্লিয়ার’’ নিয়ে কাজ করেছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে সরাসরি কাজ করব। বিষয়টি সম্পর্কে যেহেতু যথেষ্ট ধারণা নেই, তাই কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ লাগবে। এই প্রকল্পে যত টাকা পরামর্শক সেবা মাশুল দিতে হবে, তা আমাদের নিয়মিত তহবিল থেকে দেওয়া সম্ভব নয়।’ তাহলে প্রকল্পের ৭৭ শতাংশের বেশি কেন পরামর্শক সেবায় বরাদ্দ হলো—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি আগে একনেকে উঠুক। তার আগে এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ 

বেতনের ৬৫ শতাংশের সমান ভাতা 

এই প্রকল্পে সার্বক্ষণিকভাবে ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করবেন। তাঁদের আগামী ছয় বছরে ৫ কোটি টাকা বেতন দিতে হবে। তাঁরা সভা-সেমিনারে যাবেন, সে জন্য ভাতা, যাতায়াত ভাতা, ওভারটাইমসহ বিভিন্ন খাত থেকে নিয়ে যাবেন আরও সাড়ে ৩ কোটি টাকা, যা তাঁদের বেতনের ৬৫ শতাংশের সমান। এ ছাড়া তাঁদের জন্য বিদেশভ্রমণ তো আছেই। এই প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি টাকার বই ও সাময়িকী কেনা হবে। 

এই প্রকল্পে ঢাকা ও রূপপুরে সার্বক্ষণিকভাবে জনবল মাত্র ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু তাঁদের থাকার জন্য রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় দশতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের জন্য ছয়তলা অফিস ভবনও নির্মাণ করা হবে। থাকবে তিনতলা রেস্টহাউস। শুধু তা–ই নয়, এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় হবে আরেকটি দশতলা ভবন। সব মিলিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ ও ভবন নির্মাণ খাতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১২৩ কোটি টাকা। এটি ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় বৃহত্তম খরচের খাত। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়া টাকা দিচ্ছে। তাই বেশির ভাগ পরামর্শসেবা রাশিয়া থেকেই নিতে হবে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, ওই প্রকল্পে বালিশ ওঠাতেই অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে। আমার মতে, দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে ঋণ নিলে সবকিছুরই অতিরিক্ত মূল্য ধরা হয়। পরামর্শসেবার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়।’