
মেলা মানেই কেনাবেচা। আর কেনাবেচা মানেই টাকার লেনদেন। বিক্রেতা হোক বা ক্রেতা, নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থাকে সব সময়। সেই ঝুঁকি কমাতে অন্যান্য বছরের মতো এবারও মেলায় রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংক। এগুলো হলো রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা এবং বেসরকারি ডাচ্-বাংলা, ইসলামী ও মধুমতি ব্যাংক।
যদি আপনি একজন ক্রেতা হন। দেখা গেল মেলায় গিয়ে হঠাৎই দাম আর পছন্দে মিলে গেল কোনো পণ্য। পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন টাকার ঘাটতি। এতে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে হবে না। যদি আপনার পকেটে ব্যাংকের কোনো কার্ড থাকে, তাহলে মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত একাধিক ব্যাংকের এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) থেকে টাকা তুলতে পারবেন আপনি।

আর যদি বিক্রেতা হন। তাহলে মেলা শেষে গভীর রাতে সারা দিনের বেচাকেনার টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে কিছুটা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। আবার মেলার স্টল বা প্যাভিলিয়নে বিপুল অর্থ রেখে ঘরে ফিরে যাবেন, সেটিও সম্ভব না। তাই দিনের বিক্রির টাকা রাত হলে ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘরে ফেরা যাবে। আর ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে টাকা জমা ও উত্তোলনের সেই আয়োজনই রয়েছে ব্যাংকগুলোতে।
মেলায় অংশ নেওয়া ব্যাংকগুলোর অস্থায়ী কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন শাখার বর্ধিত অংশ হিসেবেই তারা মেলায় ক্রেতা–বিক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে টাকা জমা ও উত্তোলনের কাজটি করছে। পাশাপাশি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী রাত ১০-১১টা পর্যন্ত মেলায় ব্যাংকের নিয়মিত অন্যান্য সেবাও দেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মেলার অস্থায়ী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য তাঁদের কার্যালয়ে চারটি এটিএম ও দুটি ক্যাশ ডিপোজিট মেশিন রয়েছে। জমা ও উত্তোলন দুটোই মেশিনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে মেলায় বড় বড় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়নে ব্যাংকের পক্ষ থেকে পস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।
মনিরুজ্জামান আরও বলেন, টাকা জমা ও উত্তোলনের বাইরে অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার আওতায় মেলার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ছয় শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং ও দুই শতাধিক এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়েছে।
বেসরকারি মধুমতি ব্যাংকের মেলার অস্থায়ী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্য কর্মকর্তা মীর সাফাত নেওয়াজ জানান, মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তাঁদের এটিএম থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া সারা দিনের বেচাবিক্রি শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গড়ে প্রতিদিন অর্ধকোটির বেশি অর্থ জমা হয়। এবারের মেলার প্রবেশপথের ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের একটি হিসাবও খোলা হয়েছে মধুমতি ব্যাংকে, যেখানে রাতে প্রতিদিনের টিকিট বিক্রির অর্থ জমা হয়। এ ছাড়া মেলায় অংশ নেওয়া একাধিক শিল্প গ্রুপ লেনদেনের সুবিধার্থে হিসাব খুলেছে।

মেলায় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্রেতাদের দিক থেকে ব্যাংকিং সেবার বিষয়েও বেশ সাড়া মিলছে বলে সাফাত নেওয়াজ জানান। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলার কার্যালয় থেকে ২৫০টি বিভিন্ন মেয়াদি আমানত হিসাব খোলা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকেও টাকা জমা ও উত্তোলনের কাজটি করা হচ্ছে মেশিনের মাধ্যমেই। ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা জমা ও ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। মেলায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন মেয়াদি ৩০০টির মতো আমানত ও সঞ্চয় হিসাব খোলা হয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পরিতোষ বিশ্বাস জানান, মেলায় পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের যে ভ্যাট রয়েছে তা আদায়ের কাজটিই মূলত করছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির পুরোনো হিসাবধারী যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ জমা নেওয়া হয়। এর বাইরে পেমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে অন্যান্য গ্রাহকের অর্থও জমা নেওয়া হচ্ছে। পরিতোষ বিশ্বাস জানান, ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা থেকে ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা হয়েছে সরকারি কোষাগারে।