সংবাদপত্রের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব সম্পাদকদের

করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করেছেন দেশের বিভিন্ন দৈনিকের সম্পাদকেরা।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সংবাদপত্রশিল্প কঠিন সময় পার করছে। সেবাশিল্প হওয়া সত্ত্বেও তৈরি পোশাকশিল্পের চেয়ে সংবাদপত্রশিল্পকে বেশি করপোরেট কর গুনতে হচ্ছে। তাই এ খাতের করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করেছেন দেশের বিভিন্ন দৈনিকের সম্পাদকেরা।

এ ছাড়া বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) বিদ্যমান ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন সম্পাদকেরা। সংবাদপত্রের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্টের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন সম্পাদকেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় সম্পাদকেরা অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে এসব দাবি তুলে ধরেন। সভায় সম্পাদকেরা সংবাদপত্রশিল্পের কাঁচামালের ওপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।

প্রতিবছরের মতো এবারও আগামী বাজেট সামনে রেখে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল সন্ধ্যায় অনলাইনে আয়োজিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, আমাদের অর্থনীতির প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, সারা বিশ্বেই সংবাদপত্র এখন কঠিন সময় পার করছে। দেশের পোশাক খাতে যেখানে করপোরেট করহার ১০ থেকে ১২ শতাংশ, সেখানে সেবাশিল্প সংবাদপত্রে এ করহার ৩০ শতাংশ। তাই সংবাদপত্রের জন্য এ করহার ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন তিনি।

সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সংবাদপত্রের সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া বিল না পাওয়া। এক কোটি টাকা বিজ্ঞাপন বিল পাওনা থাকলে দেওয়া হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, বাজেট নেই। বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তিনি।

শাইখ সিরাজ বলেন, আসছে বাজেটে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ভর্তুকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন বাড়াতে হবে গম, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের। পাশাপাশি গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক।

সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো হবে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো কখনো হবে না। কারণ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পৃথিবীতে সবচেয়ে কম। আমরা যেসব ঋণ নিয়েছি, তার শর্ত সহজ। আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’ সে জন্য শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা ঠিক নয় বলে জানান তিনি।