সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আজিজ খান

সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের নাম। তিনি এ তালিকার ৩৪ নম্বরে আছেন। সিঙ্গাপুরে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি মার্কিন ডলার।

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস সম্প্রতি সিঙ্গাপুরভিত্তিক শীর্ষ ধনীদের এই তালিকা প্রকাশ করে। সামিট জানায়, ফোর্বস সম্পদের যে হিসাব দিয়েছে তা শুধু সামিটের বিদ্যুৎ ব্যবসার। এখানে অন্যান্য খাতের ব্যবসার সম্পদের হিসাব যুক্ত হয়নি।

ফোর্বস-এর তালিকা প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘আমাদের সব বিনিয়োগ বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সামিটের বিনিয়োগের মূল্যকে ফোর্বস বিবেচনায় নিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন করে আরও ২৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছি আমরা। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করতে এ বিনিয়োগ কাজে লাগানো হবে।’

ফোর্বস-এর তালিকায় ১ নম্বরে আছেন দেশটির আবাসন খাতের ব্যবসায়ী রবার্ট ও ফিলিপ এনজি ভ্রাতৃদ্বয়। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ১৯০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা এডওয়ার্ড সভেরিন। তাঁর বর্তমান সম্পদমূল্য ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। ২০১২ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। ৭৯০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সেই দেশের রং ব্যবসায়ী গো চেং লিয়াং।

এদিকে ২৩০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে তালিকার ১৩ নম্বরে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী অরবিন্দ টিকু। তাঁর তেল, গ্যাস, আবাসনসহ অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে। তালিকার একেবারে ৫০ নম্বরে আছেন হো কিয়ান গুয়ান। ৫৩ কোটি ৫০ ডলার সম্পদের মালিক এই ব্যবসায়ীর রয়েছে তেল, আবাসন ও সেবা খাতে ব্যবসা।

ফোর্বস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৩ বছর বয়সী আজিজ খান এক দশকের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস, অবকাঠামো খাতের ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সম্প্রতি এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জে (এসজিএক্স) তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বড় বিনিয়োগের জন্য এসজিএক্স থেকে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে সামিটের। এ বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে রয়টার্সকে আজিজ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অনেক ছোট। আমাদের বিনিয়োগের জন্য আরও অনেক বেশি অর্থ প্রয়োজন। সিঙ্গাপুর একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য এটি ভালো জায়গা।’

সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের সিঙ্গাপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন আজিজ খানের মেয়ে আয়েশা আজিজ খান।

সামিটের যাত্রা শুরু হয় ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে। পরে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবসায় এসে ভালো করে প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায় তাদের দ্রুত অগ্রগতি হয়। ১৯৯৮ সালে সামিটের প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যায়। সামিটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তাদের ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা মোট ১ হাজার ৯৪১ মেগাওয়াট। সামিট করপোরেশন সম্প্রতি ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে)। সামিটের এই প্রকল্পে অংশীদার হচ্ছে জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)।

সামিটের দাবি, এটি এখন পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হবে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে। সেখানে একই প্রকল্পের অধীনে একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং একটি জ্বালানি তেলের টার্মিনালও নির্মিত হবে। এ ছাড়া আরেকটি ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথাও রয়েছে। এ বিষয়ে গত জুলাই মাসে সামিট, মিতসুবিশি ও জিইর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। সামিট জানায়, এই প্রকল্পে তাদের মালিকানা ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া মিতসুবিশির ২৫ ও জেনারেল ইলেকট্রিকের ২০ শতাংশ মালিকানা থাকবে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী বছর শুরু হবে এবং বাস্তবায়ন শেষ হবে ২০২৩ সালে। এর মাধ্যমে সামিটের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে।

উল্লেখ্য, সামিট গ্রুপের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। সামিটের মালিকানা আছে এমন তিনটি কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। কোম্পানিগুলো হচ্ছে সামিট পাওয়ার, সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল)। সামিট সিঙ্গাপুরে কাজ শুরু করে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে।