সোনা দিয়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে চায় সিএসই

চলতি বছরের মধ্যেই দেশে পণ্য কেনাবেচার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে চায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। শুরুতে সোনা কেনাবেচার মধ্য দিয়ে নতুন এ কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু করতে চায় সংস্থাটি। গতকাল সোমবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা এমসিএক্সের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে অনলাইনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সিএসই ও এমসিএক্সের মধ্যে আজ মঙ্গলবার এ চুক্তি সই হবে।

চলতি বছরের মধ্যে পণ্য বেচাকেনার নতুন এ এক্সচেঞ্জ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। শুরুতে সোনা কেনাবেচার সম্ভাব্যতা ধরে নিয়ে কাজ চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কোন পণ্যের লেনদেন শুরু করা হবে, তা নির্ভর করছে চূড়ান্ত যাচাই–বাছাইয়ের পর।
আসিফ ইব্রাহিম,চেয়ারম্যান, সিএসই

সংবাদ সম্মেলনে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম জানান, চলতি বছরের মধ্যে পণ্য বেচাকেনার নতুন এ এক্সচেঞ্জ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। শুরুতে সোনা কেনাবেচার সম্ভাব্যতা ধরে নিয়ে কাজ চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত কমোডিটি এক্সচেঞ্জে কোন পণ্যের লেনদেন শুরু করা হবে, তা নির্ভর করছে চূড়ান্ত যাচাই–বাছাইয়ের পর। আর এ যাচাই–বাছাইয়ের কাজটি করবে এমসিএক্স।

আরও পড়ুন

সিএসইর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনা ছাড়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও তুলা—এ তিনটি পণ্য লেনদেনের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে এমসিএক্স। যদি তিনটি পণ্যের কেনাবেচার বিষয়ে এমসিএক্সের সুপারিশ পাওয়া যায়, তাহলে তিনটি পণ্য দিয়ে নতুন এক্সচেঞ্জটির কার্যক্রম শুরু করা হবে। অন্যথায় শুধু সোনা তথা সোনার বার কেনাবেচার মধ্য দিয়েই প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। পরে ধাপে ধাপে অন্যান্য পণ্য যুক্ত করা হবে।

আরও পড়ুন

গত বছরের ২৮ অক্টোবর দেশে প্রথমবারের মতো ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিক সম্মতি পেয়েছে সিএসই। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে গত আগস্টে সিএসইর পর্ষদ সভার কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ অনুযায়ী, কৃষিপণ্য, গবাদিপশু, মাছ, বনজ সম্পদ, খনিজ ও জ্বালানি পণ্যসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের আওতায় কেনাবেচা করা যাবে। এসব পণ্য কেনাবেচা বা লেনদেনের উদ্দেশ্যে যে এক্সচেঞ্জ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, সেটিই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত হবে।

আরও পড়ুন

সিএসইর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদি সোনা দিয়ে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের লেনদেন শুরু হয়, তাহলে এ লেনদেনে অংশ নেওয়ার দেশের বিদ্যমান সোনা ব্যবসায়ীদের যুক্ত করা হবে। বর্তমানে দেশে বুলিয়ন মার্কেটে সোনার বার বা বিশুদ্ধ সোনা কেনাবেচা করা হয়। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সোনার লেনদেন শুরু হলে সে ক্ষেত্রে বুলিয়ন মার্কেটের মতোই এ এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সোনা কেনাবেচা হবে। তাতে সোনার মান ও পণ্যের নিশ্চয়তা যেমন তৈরি হবে তেমনি বাজারভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ হবে। বর্তমানে সোনার দাম ঠিক করেন সোনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী সংগঠন। এক্সচেঞ্জে সোনার কেনাবেচা শুরু হলে তখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশি-বিদেশি একাধিক দরদামের ওপর ভিত্তি করে এ দাম নির্ধারিত হবে।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। সেই কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো দোকান, গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কী
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। সেই কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো দোকান, গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।
ধরা যাক, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে আলু কেনাবেচা হলো। সরাসরি কৃষক বা হিমাগারের মালিক, যাঁর মালিকানায় পণ্যটি রয়েছে, তিনি এই আলু বিক্রি করতে পারবেন। আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যে কেউ এই আলু কিনতে পারবেন। আইনের মাধ্যমে এই আলু কেনাবেচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত একটি সময় বেঁধে দেওয়া হবে। ওই সময় ক্রয়াদেশটি যাঁর হাতে থাকবে, তাঁকে বিক্রীত ওই আলু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছিলেন সিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়াত ওয়ালিউল মারুফ মতিন।

জানা গেছে,দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছিলেন সিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রয়াত ওয়ালিউল মারুফ মতিন। এ জন্য তিনি কমোডিটি অ্যান্ড ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (সিডিএক্স) নামের একটি কোম্পানিও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অনুমোদন পাননি।