হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা

  • কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে।

  • নতুন করে এ বছর জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও গোদাগাড়ী এলাকায় আমের চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে।

  • এবার জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন।

রাজশাহীতে আমের বাণিজ্য এবার প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এমনটাই আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যদিও এবার ফলন গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর। ফলন কম হলেও বাড়তি দামের কারণে এবার ভালো ব্যবসা হয়েছে আমের।

রাজশাহীর আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর যে টাকায় তিন মণ আম বিক্রি হয়েছে, এবার সেই টাকায় বিক্রি হচ্ছে দুই মণ আম। যদিও আমের মুকুল গত বছরের চেয়ে ২১ শতাংশ কম হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এর আগে এক মৌসুমে আমের বাণিজ্য বা ব্যবসা ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে ঘুরপাক খেয়েছে। এবার বাড়তি দামের কারণে তা ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম বাড়তি। তাতেই প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকার ব্যবসার আশা করছেন আম ব্যবসায়ী ও বাগানমালিকেরা।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে চাষের এলাকা বেড়েছে ৫৭২ হেক্টর। গত বছর এ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এবার সেখানে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। নতুন করে এ বছর জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও গোদাগাড়ী এলাকায় আমের চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। চাষের জমি বাড়লেও ফলন হয়েছে কম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাটে বড় আমগাছগুলোতে এবার মুকুল কমে এসেছে। তাই উৎপাদন গতবারের চেয়ে কিছুটা কম। তবে দামের দিক থেকে গত বছরের চেয়ে এবার কৃষকেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। গত বছর আমের মণপ্রতি দাম ছিল গড়ে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। এবার তা মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় এবার আমের বাণিজ্য প্রথমবারের মতো ১ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। বানেশ্বর কলেজ মাঠে এবার আমের বাজার বসেছে। পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ব্যবসায়ীরা আমের হাট বসিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ গেট দিয়ে একের পর এক আমের ভ্যান বাজারে ঢুকছে। বাজারে দাপট এখন ক্ষীরশাপাতি আমের। প্রতি মণের গড় দাম ৩ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে লকনা আম। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে এই জাতের আম। ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ। কিছু ল্যাংড়া ও আম্রপালিও বাজারে উঠেছে। কিন্তু মৌসুম শুরু না হওয়ায় এই আমের বাজার এখনো জমে ওঠেনি। ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা মণ। আর আম্রপালি প্রতি মণের দাম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা।

এই বাজার থেকে আম কিনে ‘ফ্রুটস হান্ট’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করেন অনলাইন ফল ব্যবসায়ী জুয়েল মামুন। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর তিন মণ আম বেঁচে যে টাকা পাওয়া গেছে, এবার দুই মণ আম বিক্রি হচ্ছে সেই দামে। তবে সরবরাহ গত বছরের চেয়ে একটু কম।

বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ও আমের হাটের ইজারাদার ওসমান আলী গতকাল সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এবার বানেশ্বর বাজারে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে। বেশির ভাগ আম রাজশাহীর বাইরের ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর হিসাবে,এই মৌসুমে শুধু বানেশ্বর হাটে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে।

রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। সাদি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে বাঘা থেকে ইউরোপে আম রপ্তানি করছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আসাফুদ্দৌলা জানান, এত দিন তাঁদের ভালোই বেচাকেনা হয়েছে। দুই দিন ধরে বিক্রি কিছুটা কম। গত দুই দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণেও বিক্রি কমে গেছে বলে মনে করছেন তিনি।

বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের বাগানে এবার আমের ভালো উৎপাদন হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে আমের চাহিদা কমে গেছে। সামনে ঈদুল আজহা। কোরবানির কেনাকাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। এ কারণে আমের বিক্রি কিছুটা কমে যেতে পারে। আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেও মানুষ আম কেনা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন বলেও ধারণা করছেন তিনি। এরপরও তিনি আশা করছেন, মৌসুমজুড়ে ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।