১০ বছর চেষ্টার পর হাল ছেড়ে দিয়েছি

১০ বছর চেষ্টা করেও মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবা বা এমএফএস সেবার লাইসেন্স না পেয়ে এ বিষয়ে আর না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামীণফোন। এর ফলে প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী সেবা থেকে দেশের মানুষ বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন মুঠোফোন অপারেটরটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পেটার বি ফারবার্গ।
প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমএফএস সেবা ছাড়াও সেবার মান, বেতার তরঙ্গের ব্যবহারসহ টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন পেটার বি ফারবার্গ।
পেটার বি ফারবার্গ বলেন, ‘এ সেবা দিতে বাংলাদেশ ১০ বছর ধরে চেষ্টা করে আসছে গ্রামীণফোন। এ জন্য অনেক বিনিয়োগও করা হয়েছে কিন্তু লাইসেন্স না পাওয়ায় আমরা সেবাটি দিতে পারছি না। এমনকি ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে সেবা দিতেও আমরা চেষ্টা করেছি। এখন এটা অনেকটাই পরিষ্কার যে মুঠোফোন অপারেটরদের এ সেবার অনুমতি দেওয়া হবে না। সেটি বুঝতে পেরে এখন আমরা এ বিষয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের মানুষ। কারণ, বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে না। তবে বিল পরিশোধ, টিকিট কাটার অর্থ পরিশোধের মতো কিছু সেবা গ্রামীণফোন দিয়ে যাচ্ছে, এটি অব্যাহত থাকবে।’
তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) টেলিযোগাযোগ সেবার মান নিয়ে গ্রাহক অভিযোগের বিষয়ে পেটার ফারবার্গ বলেন, দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, গ্রামীণফোনের সবার সেরা থ্রিজি নেটওয়ার্ক রয়েছে। কিন্তু সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক থাকলেও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কারণ, থ্রিজিতে দেওয়া বেতার তরঙ্গের সম্প্রসারণজনিত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতা কাটাতে তরঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার (টেকনোলজি নিউট্রালিটি) নীতি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, থ্রিজির জন্য বাংলাদেশে ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর টুজির জন্য রয়েছে ৯০০ ও ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ। বেতার তরঙ্গের স্বাভাবিক আচরণ অনুযায়ী, কম মাত্রার ব্যান্ডে তরঙ্গ অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়। ফলে ৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের বেতার তরঙ্গ অনেক বেশি সম্প্রসারিত বৃত্ত তৈরি করে। তাই এই ব্যান্ডে অনেক উঁচু ভবনেও সেবা দিতে সমস্যা হয় না। কিন্তু ২ হাজার ১০০ অথবা ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজে তরঙ্গের অনেকটাই সংকুচিত বৃত্ত তৈরি করে। সহায়ক নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করেও একে খুব বেশি সম্প্রসারণ করা যায় না। সংকুচিত বৃত্তের কারণেই যেখানেই উঁচু ভবন রয়েছে, সেখানেই নেটওয়ার্ক বাধা পাচ্ছে। ভবনের ভেতরেও নেটওয়ার্ক দুর্বল হচ্ছে। এটা তখনই নিশ্চিত করা যাবে, যখন ৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে সম্প্রসারিত বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে থ্রিজি সেবার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
২০১৬ সালের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিষয়ে পেটার ফারবার্গ বলেন, গ্রামীণফোনের প্রায় ১১ হাজার টাওয়ার এখন টুজি ও থ্রিজি প্রযুক্তির। এর ফলে মানুষ এখন বেশি পরিমাণে ইন্টারনেট ডেটা ও ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করতে পারছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোনের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে গত বছর। সব মিলিয়ে গ্রামীণফোন এখন আর শুধু টেলিযোগাযোগ সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।