১২ বছর বয়সে সুঁই–সুতার সঙ্গে সখ্যতা হেনা খাতুনের

স্টলে হাতের কাজ করা পণ্য—সিল্ক, সুতি, এন্ডির শাড়ি, কামিজ ও ওড়না। কাজের ধরন সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বোঝা যায়, সুচিশিল্পে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষিত, দক্ষতাও অনেক বছরের। কারুকাজে আকৃষ্ট হয়েই কথা হয় হেনা খাতুনের সঙ্গে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে চলমান আট দিনব্যাপী জাতীয় এসএমই মেলার শেষ দিনে গত রোববার কথা হয় মহৎ হস্তশিল্পের স্বত্বাধিকারী হেনা খাতুনের সঙ্গে। জামালপুর থেকে তিনি এসেছেন হস্তশিল্প নিয়ে। বললেন, অন্য বছরের চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে এবারের মেলায়। তবে স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র থাকলে তাঁর মতো উদ্যোক্তাদের সুবিধা হতো বলে মনে করেন হেনা খাতুন।

প্রান্তিক উৎপাদক হেনা খাতুন হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করছেন প্রায় কিশোর বয়স থেকে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি হাতে তুলে নেন সুই-সুতা। বাকি গল্পটা শোনা যাক তাঁর মুখেই, ‘আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমাদের এলাকায় আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের কর্মীরা গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে আসেন। আমার মা, চাচি, খালা, ফুফু—সবাই প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের পরে তাঁরা চাকরিও পান ফাউন্ডেশনে। সেই থেকে আমাদের পরিবারের নারীরা এই পেশায় জড়িয়ে পড়েন।’

আরও পড়ুন

বাড়ির বড়দের সঙ্গে থেকে থেকে কাজ শিখে যান হেনা খাতুনও। স্কুল পাস করেই চাকরি পান আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনে। প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর তিনি ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করেছেন। এর মধ্যেই হেনা খাতুন বিয়ে করেন। চার সন্তানের মা হন। তাঁর স্বামী সরকারি চাকরি করেন। সীমিত আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে ওঠে। একসময় হেনা খাতুনের মনে হয়, চাকরির গৎবাঁধা কাজে থেকে যে আয় হয়, তার চেয়ে নিজে কিছু করলে বেশি আয় করা সম্ভব।

হেনা খাতুন বলেন, ‘খুব একটা ভাবিনি। হাতে হাজার পাঁচেক টাকা ছিল, আর দু–চারজন মেয়ে ছিল কাজ করার মতো—এই নিয়েই আমি ১৯৯৫ সালে শুরু করি নিজের উদ্যোগ—মহৎ হস্তশিল্প।’

মহৎ হস্তশিল্পের মূল কাজ হলো ঢাকার পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পণ্য তৈরি করা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত মেলায় অংশ নেয় তারা। নিজ এলাকায় প্রায় ৫০০ নারীর কর্মসংস্থান করেছেন তিনি। হেনা বলেন, করোনার আগে ৫০০ মেয়ে কাজ করত। এখন বিক্রি কমে আসায় কর্মীর সংখ্যাও কমেছে।

হেনা খাতুনের মাসিক বিক্রি এখন প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। তবে এই আয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন তিনি। হেনা খাতুন বলেন, ‘যতই কাজ করি না কেন, আমাদের মুনাফা খুব কম। এরপরও সন্তুষ্টির জায়গা হলো, ব্যবসা চালু আছে। আমার বোনেরা এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তাতে সব সময়ই কিছু না কিছু আয় হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

এই পরিস্থিতিতে কী হলে ভালো হতো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজে সরাসরি বিক্রি করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। সে জন্য তিনি দেশের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেন। স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র থাকলে সবচেয়ে সুবিধা হতো। এতে যেমন তাঁরা নিজেদের পণ্য নিজেরা বিক্রি করতে পারতেন, তেমনি ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগও হতো।