১৫ শতাংশ মূসক মানতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে িনর্মাণাধীন এনবিআর ভবনে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ডান থেকে তৃতীয়)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ​এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ অন্যরা l প্রথম আলো
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে িনর্মাণাধীন এনবিআর ভবনে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত (ডান থেকে তৃতীয়)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ​এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ অন্যরা l প্রথম আলো

নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের ১৫ শতাংশ হারে মূসক মানতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। এই হার কমানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা প্যাকেজ মূসক বহাল রাখার দাবিও জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন মূসক আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আর ব্যবসায়ীদের পক্ষে সভায় নেতৃত্ব দেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
সভায় ব্যবসায়ীদের জানানো হয়, নতুন আইনে ১৫ শতাংশ হারেই মূসক বহাল রাখতে চায় সরকার। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা তা মানতে রাজি নন। এমন অবস্থায় সভায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই আবারও আলোচনা হবে এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সভাটি শেষ হয়। উল্লেখ্য, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন করার ঘোষণা আছে।
সভার দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সব খাতের জন্য ১৫ শতাংশ হারে মূসক নির্ধারণ না করার দাবি জানানো হয়। এর পক্ষে যুক্তি হলো যে ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইরান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ১৫ শতাংশের কম হারে মূসক নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব হলো উৎপাদন খাতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং সেবা খাতে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের মতে, ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ হলে ব্যবসায়িক খরচ বাড়বে এবং ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, ব্যবসায় ও সেবা খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা সার্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে আরও জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে টার্নওভার করের জন্য ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার সীমা বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করার দাবি জানানো হয়। তবে সরকার এ বিষয়ে নমনীয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্যাকেজ মূসক-ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবিও জানানো হয়। সভায় নতুন আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এনবিআরের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা (সরকারপক্ষ) বলেছে, আবার বসতে হবে। ব্যবসায়ীরাও তাতে রাজি হয়েছেন।’
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, মূসক আইনের সবকিছু আমরা খারাপ বলছি না। এই আইনের কিছু কিছু বিষয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আপত্তি আছে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব বিষয়ে আপত্তি আছে, তা সভায় তুলে ধরা হয়েছে।
অনলাইনে মূসক নিবন্ধন
অনলাইনে মূসক নিবন্ধনসহ যাবতীয় কর পরিশোধ করা যাবে। এ জন্য গতকাল ‘ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম’ উদ্বোধন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন এনবিআর ভবনে এই অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসায়ীরা মূসক দেবেন এটাই প্রত্যাশা করি।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। অনলাইন-ব্যবস্থা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এতে হয়রানি দূর হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির।