
সরকারের কাছ থেকে সেবা না পেলে জনগণ কর দেবেন কেন—এ প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কামরুল হাসান খান।
সম্প্রতি গঠিত সংগঠন বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট (বিএসটি) আয়োজিত ‘স্বপ্নপূরণের বাজেট’ শীর্ষক সংলাপে কামরুল হাসান খান বলেন, ‘কিছু তো আগে পাব, তাহলেই না কর দেব। আমার মনে হয়, এ প্রশ্ন শুধু আমার নয়, সবারই।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত এই সংলাপে বিএসএমএমইউর উপাচার্যের প্রশ্নটির বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ।
নাজনীন বলেন, ‘আপনি তো সরকারি চাকরিই করেন। যে বেতনটা পান, সেটা কিন্তু করের টাকা। কতজন ডাক্তার কর দিচ্ছেন, নিয়ম মেনে দিচ্ছেন কি না, তারপর বলতে হবে সরকার থেকে কী পাচ্ছেন বা পাচ্ছেন না।’
একই বিষয়ে পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেন, ‘যুবকেরা কর দিতে বেশি উৎসাহী। যখন করমেলায় যাই, খুবই খুশি লাগে আমার।’ আগামী অর্থবছরে করদাতা বর্তমানের ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখে উন্নীত করতে চান বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি আশা করেন, পরের দুই বছরে তা হবে ২০ লাখ।
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বাস্তবায়নকে ‘মহাসমস্যা’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের নমনীয় হওয়ার অনুরোধ জানান।
অর্থমন্ত্রী ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। বিএসটির চেয়ারম্যান এ কে আবদুল মোমেন সংলাপে তিন পৃষ্ঠার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বপ্নপূরণের বাজেট বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বাজেট ২০৪১ সালের মধ্যে ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
আবদুল মোমেন বলেন, কথিত আছে যে অনেকেই মালয়েশিয়া, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় বাড়িঘর কিনেছেন, ‘বেগম পাড়া’ তৈরি করেছেন, ছেলেমেয়েদের নিজের খরচে বিদেশে পড়াচ্ছেন, ঘুষ-দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সরকার চাইলে এঁদের চিহ্নিত করা কঠিন নয়।
বাজেটের কিছু ইতিবাচক দিক উল্লেখ করেও সংলাপের প্রধান আলোচক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন দেশের কর আদায়ের পদ্ধতিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন, কী যে ভুল করেছিলাম একবার কর দিয়ে। এখন আমার কাছেই বেশি আসে।’
সরকারি অর্থের অপচয় নিয়েও আফসোস করেন ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নদীর পাড় ভাঙার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড বোল্ডার ফেলছে প্রবল বর্ষণের মধ্যেও। কতটা ফেলছে, তাও জানি না। করের টাকা এভাবে কত যে জলে চলে যায়।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুনি বেশি, বলি কম। মৌমাছির মতো শুধু আহরণ করি।’
বিএসএমএমইউর উপাচার্য কামরুল হাসান খান স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়ানোর দাবি জানান।
বগুড়ার বেসরকারি সংস্থা পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক এম এ মতিন বলেন, শুধু বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ কী? বগুড়া মেডিকেল কলেজে কত যন্ত্রপাতি পড়ে আছে—বাক্সই খোলা হয়নি। দেখতে হবে টাকা যাচ্ছে কোথায়?
এম এ মতিন প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাভার-কালিয়াকৈর রাস্তাটি চার লেন হওয়ার এক বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য যারা দায়ী, তাদের কেন ধরা হবে না?
বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রতীকী বরাদ্দ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। বিআইডিএসের গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘প্রতীকী’ শব্দটি শুনতে খারাপ লাগে। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক রাশেক রহমান এবং ৭১ টিভির পরিচালক (বার্তা) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।