অনলাইনে জমেছে ঈদের কেনাকাটা

ঝামেলা এড়াতে অনেকে অনলাইনে কেনাকাটা সারছেন। আবার অনেকে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য খুঁজছেন রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসা দোকানগুলোয়।

ই–কমার্সপ্রতীকী ছবি

নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তিগত সুযোগ–সুবিধা সহজলভ্য হয়ে ওঠায় অনেকেই এখন অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। আবার বাজারের অব্যবস্থাপনা, তীব্র যানজট এবং দেশব্যাপী অস্বাভাবিক গরম পড়াসহ নানা কারণেও অনলাইনে কেনাকাটা করার দিকে মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতারা অনলাইনে পোশাক–পরিচ্ছদ, জুতা, জুয়েলারিসহ সেমাই–চিনির মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোই বেশি কিনেছেন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, অনলাইনে সাধারণত এখন দিনে সাত লাখের মতো পণ্যের ক্রয়াদেশ আসে এবং তা সরবরাহ হয়ে থাকে। বাজার ভালো থাকলে সংখ্যাটা ৮ লাখেও ওঠে। কিন্তু ঈদের মৌসুমে সার্বিকভাবে অনলাইনে পণ্য বিক্রি ৩০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন অনলাইনে ১০ লাখের বেশি ক্রয়াদেশ আসছে ও পণ্য সরবরাহ হচ্ছে।

অন্যান্য সময়ে দৈনিক গড়ে এক লাখ পণ্যের অর্ডার হতো দারাজে, যা এবার ঈদ উপলক্ষে বেড়ে প্রায় দুই লাখ হয়েছে। প্রচণ্ড গরম, যানজট ও কর্মব্যস্ততা এসব কারণে অনলাইনে মানুষের আস্থা বাড়ছে।
এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান, দারাজ

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের আগে এসে অনলাইনে ক্রয়াদেশ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পোশাকসামগ্রীতে। বাড়তি ক্রয়াদেশের প্রায় ৮০ শতাংশই হলো পোশাকে। এ ছাড়া ঈদের আগে গেজেট আইটেম বা নিত্যব্যবহার্য ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্রয়াদেশও বেশ বেড়েছে।

রাজধানীর পল্টনের বাসিন্দা শারাফাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে পাঞ্জাবি কিনেছি। এখন শপিং মলে গিয়ে কেনাকাটা করার চেয়ে এটাকেই সুবিধাজনক মনে হয়।’

সব মিলিয়ে গতবারের চেয়ে এবারের ঈদবাজারে অনলাইন কেনাকাটায় ২৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। অনলাইনে একটি ক্রয়াদেশের সর্বনিম্ন গড় মূল্য ১ হাজার ৩০০ টাকা। ই–ক্যাব জানায়, গত এক মাসে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে অনলাইন দোকানগুলোতে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে।

গত বছরের চেয়ে এবার আমাদের ব্যবসা বেড়েছে ২০ শতাংশের মতো। ঈদকে কেন্দ্র করে এসি ও ফ্রিজের চাহিদা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ৫টি ব্যাংক, বিকাশ ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
ইব্রাহিম স্বপন, নির্বাহী প্রধান, অথবা ডটকম

ই–ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিন দিন অনলাইনে কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, যা ঈদের মতো উৎসবে বেড়ে যায়। অনলাইনে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের টানতে মূল্যছাড়সহ নানা সুবিধা দিয়ে থাকে। অনলাইন কেনাকাটায় মানুষ যাতে নিরাপদ বোধ করে, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ ‘৪.৪ গ্র্যান্ড ঈদ ফেস্ট’ শীর্ষক অফারে ক্রেতাদের জন্য মূল্যছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। এর আওতায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড়ে ক্রেতারা তাঁদের পছন্দের পণ্য কিনতে পারছেন। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রি–পেমেন্টে বা অগ্রিম মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি দারাজ ৪২৯ টাকায় যেকোনো ৩টি পণ্য কেনার মতো সুবিধা দিয়েও ক্রেতা টানার চেষ্টা করছে।

দারাজের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স প্রধান এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার ক্রয়াদেশ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পোশাক, এরপরে প্রসাধনী ও গৃহসজ্জার মতো পণ্য। অন্যান্য সময়ে দৈনিক গড়ে এক লাখ পণ্যের অর্ডার হতো দারাজে, যা এবার ঈদ উপলক্ষে বেড়ে প্রায় দুই লাখ হয়েছে। প্রচণ্ড গরম, যানজট ও কর্মব্যস্ততা এসব কারণে অনলাইনে মানুষের আস্থা বাড়ছে।’

এদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষ এবার ঈদের পোশাকের বাইরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বা ফ্রিজের মতো পণ্যও কিনছে। এ ছাড়া ঈদের সময়ে মোবাইল, হেডফোন ও স্মার্ট ঘড়ির মতো পণ্যও কিনে থাকেন তরুণেরা।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ই-কমার্স ‘অথবা ডটকম’–এর প্রধান ইব্রাহিম স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার আমাদের ব্যবসা বেড়েছে ২০ শতাংশের মতো। ঈদকে কেন্দ্র করে এসি ও ফ্রিজের চাহিদা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে ৫টি ব্যাংক, বিকাশ ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাতে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতারা। এতে সবাই লাভবান হচ্ছেন।’

ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে অনলাইনে মুদিপণ্যের জন্য ক্রয়াদেশ বেশি আসছে। তাই গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন অফার দিয়েছে প্যান্ডামার্ট। ঈদের প্রয়োজনীয় মুদিপণ্যের পাশাপাশি প্রসাধনীর ওপর ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে তাদের। গরুর মাংস, মুরগির মাংস ও ডিমের ক্ষেত্রে তারা ক্রেতাদের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। দুটি সেমাই কিনলে একটি এবং চারটি কফি কিনলে একটি ফ্রিতে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে নিত্যপণ্য ক্রয়ের সেবা দিচ্ছে ফুডপ্যান্ডার প্যান্ডামার্ট, চালডাল, স্বপ্ন, মীনাবাজারসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

ফুডপ্যান্ডার পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ও জনসংযোগ প্রধান জাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ঘরে প্রতিদিনকার রান্নার উপকরণ ছাড়াও গৃহস্থালিতে যা যা প্রয়োজন, তার সবই আছে প্যান্ডামার্টে। ঈদকে ঘিরে ব্যস্ততা বেশ বেড়েছে। অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের আগে প্যান্ডামার্টে অর্ডারের সংখ্যা ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।’

ফুটপাতে বেচাকেনায় গতি

রাজধানীর গুলিস্তান, নিউমার্কেট ও গাউছিয়ার মতো এলাকায় ফুটপাতের দোকানগুলোতেও বেচাকেনা এখন বেশ জমে উঠেছে। তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে কেনাকাটা করার সুযোগ থাকায় ক্রেতাদের একটি বড় অংশ এই জায়গাগুলোতে যান। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ বা এক হাজার টাকার মধ্যে কেনাকাটা করেন, এমন ক্রেতাদের কাছে ফুটপাতই সবচেয়ে বড় ভরসা।

ঢাকার গাউছিয়া মার্কেটের ফুটপাতের বিক্রেতা আক্কাস আলী গতকাল রোববার জানান, ভালো মানের পণ্য নিয়ে বসতে পারলে ফুটপাতেও ভালো ব্যবসা করা যায়। ঈদ উপলক্ষে এখন তাঁর দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গরমে ক্রেতারা এসি মার্কেট ছাড়া ঢুকছেন না। আর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় অনেকে রাস্তার পাশ থেকে কম দামে পণ্য কিনছেন।