পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বর বাংলাদেশ

পেঁয়াজফাইল ছবি

নেদারল্যান্ডস বিশ্বের ১৪০টি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করে। তবুও ইউরোপের এই দেশের আফসোসের যেন শেষ নেই। হল্যান্ড পেঁয়াজ সমিতির জার্নালে কয়েক দিন আগেও লেখা হয়েছে—ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে বাংলাদেশের মতো বড় বাজারে ডাচ পেঁয়াজের পুরোনো হিস্যা পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছে না।

ডাচদের আফসোস করার হয়তো যুক্তি আছে। কারণ, বাংলাদেশ শুধু পেঁয়াজের বড় একটি বাজারই নয়, বরং পরিমাণের দিক থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বরে রয়েছে দেশটি। দেশভিত্তিক পেঁয়াজ আমদানির তথ্য তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করে। ওই বছর আর কোনো দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেনি। জাতিসংঘের পণ্যবাণিজ্য পরিসংখ্যানের তথ্যভান্ডার (ইউএন কমট্রেড) অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পর যে দেশটি সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র। তাদের আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। এরপরের অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। তাদের আমদানি সোয়া পাঁচ লাখ টন।

স্থানীয় উৎপাদনের দিক থেকেও বাংলাদেশ খুব পিছিয়ে নেই। পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, তবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের আমদানি বাড়ছে, তবে এই আমদানির পরিমাণ এতটাই যে তা বিশ্বতালিকায় বাংলাদেশকে শীর্ষে নিয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, মানুষের আয় বৃদ্ধি ও পেঁয়াজের ব্যবহারের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, দেখা গেছে, মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে পেঁয়াজের ভোগও বেড়ে যায়। এখন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পেঁয়াজের ব্যবহার আরও বেড়েছে। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে।

পেঁয়াজ আমদানিতে শীর্ষতালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ভবিষ্যতে নড়চড় হবে, এমন কোনো শঙ্কা অবশ্য নেই। কারণ, ২০২৩ সাল শেষ হতে এক মাস বাকি থাকতেই আগের বছরের আমদানির রেকর্ডও ভেঙে গেছে। এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ মাসে পেঁয়াজের আমদানি ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০২৩ সাল শেষেও আমদানির শীর্ষতালিকায় থাকবে বাংলাদেশের নাম, এমনটা ধরে নেওয়া যায়।

নেদারল্যান্ডসের কথায় ফেরা যাক। বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে না পারার বিষয়ে ইউরোপের শীর্ষ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এই দেশের আফসোস বুঝতে হলে চার বছর আগে ফিরে যেতে হবে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের বাজারে প্রথম আমদানি হয় ডাচ পেঁয়াজ। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে হল্যান্ড পেঁয়াজ সমিতি জানিয়েছিল, ওই সময় নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজ রপ্তানিতে শীর্ষ ১২ গন্তব্যের একটি ছিল বাংলাদেশ।

অবশ্য ওই বছরের মার্চে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ফলে নেদারল্যান্ডস থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার ভারত থেকে আমদানি শুরু করেন এ দেশের পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা। কারণ, সবচেয়ে সহজ ও কম দামে পেঁয়াজ আনা যায় প্রতিবেশী এই দেশ থেকে, যেটি আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। তখন থেকেই ইউরোপের দেশটির আফসোস গাঁথা লেখা হতে থাকে জার্নালের ভার্চ্যুয়াল পাতায়।

তবে নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের আফসোস দীর্ঘস্থায়ী না–ও থাকতে পারে। ৭ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে। এরপর বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার রাতারাতি চড়া হয়েছে, ব্যবসায়ীরা এখন পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প বাজারের খোঁজ করতে শুরু করেছেন। নেদারল্যান্ডসের রপ্তানিকারকেরা এই সুযোগ কাজে লাগাবেন, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। কারণ, পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় বাজার যে বাংলাদেশই।