ব্যবসার পরিবেশ উন্নতির তাগিদ

তিন দিনের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাবিষয়ক কর্ম অধিবেশনে এ মন্তব্য করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

এফবিসিসিআই আয়োজিত ব্যবসা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও বস্ত্র খাত পরিস্থিতি’ শীর্ষক অধিবেশনে অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো

ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ পেতে হলে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া সরবরাহব্যবস্থায় চীনের বিকল্প হতে হলে গ্লোবাল ফ্যাক্টরি বা বৈশ্বিক কারখানার যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করাও জরুরি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম কর্ম অধিবেশনে গতকাল রোববার বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব কথা বলেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতারা বিনিয়োগের সম্ভাবনার পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাবিষয়ক কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভোক্তাশ্রেণি বিশ্বের নবম শীর্ষ। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত ৩ কোটি ৪০ লাখে গিয়ে দাঁড়াবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের গড় বয়স ২৮ বছর। দেশের ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষই কাজে নিয়োজিত। আবার বাংলাদেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ মুঠোফোন ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৮০ লাখের বেশি। সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার আছেন দেশে।

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে শ্রমিকের মজুরি পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় ৪৭-৮৪ শতাংশ কম দিতে হবে। ব্যবস্থাপকদের বেতন কম দিতে হবে ৪১-৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশে পানির খরচ ৬-৮৯ শতাংশ কম। বিদ্যুতের খরচ পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় ১০-৫৫ শতাংশ সাশ্রয়ী। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে বাংলাদেশ সরকার চার হাজার কোটি ডলারের অবকাঠামো নির্মাণ করছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই কঠোর।’

বাংলাদেশে বিনিয়োগ খুবই সুরক্ষিত বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের রাজস্ব ও রাজস্ববহির্ভূত নীতিসহায়তা দেওয়া হয়। তা ছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশ বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মাণ করা হচ্ছে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। চীন, জাপান, কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহ দেখিয়েছেন। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের এই ট্রেন মিস না করতে আহ্বান জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। তার মধ্যে ১০টি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করলেই জমির পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য অবকাঠামো পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ আকারে পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৯০ শতাংশ কৃত্রিম তন্তুর। এ ধরনের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে হলে সরকারের নীতিসহায়তা লাগবে।’

যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এফসিডিও) প্রতিমন্ত্রী (ইন্দো-প্যাসিফিক) অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান বলেন, যুক্তরাজ্যের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা উচ্চশিক্ষা ও আর্থিক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।

কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সির গ্রিন গ্রোথ ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক জং ওন কিম বলেন, যেসব কোম্পানি চীন থেকে কারখানা সরাতে চায়, তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। তবে চীনের বিকল্প হতে হলে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক কারখানা স্থাপনের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

এই অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রমুখ।

পোশাক ও বস্ত্র খাত নিয়ে অধিবেশন

পোশাক ও বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বিষয়ে অপর এক অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, পরিচালক আজিজুর আর চৌধুরী, ওয়ালমার্টের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শ্রীদেবী কালাভাকোলানু প্রমুখ।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, বর্তমানে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক উৎপাদনে বেশি জোর দিতে হবে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। সরকারের নীতিসহায়তাও লাগবে। বিশ্বে যত পোশাক রপ্তানি হয়, তার মধ্যে ৭৫ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর। অথচ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের সিংহভাগ তুলার তৈরি।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, সামনেই বাজেট। কৃত্রিম তন্তুর পোশাক উৎপাদন বাড়াতে কী কী সহায়তা লাগবে, তা যদি ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্টভাবে সরকারপ্রধানের নিকট উপস্থাপন করেন, তাহলে ইতিবাচক ফল আসবে।