ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় আগ্রহ কম, ২ হাজার কোটি ডলার লোকসান মেটার

মার্ক জাকারবার্গ

ভার্চ্যুয়াল জগতে মার্ক জাকারবার্গের বিনিয়োগ তেমন আশার আলো দেখাচ্ছে না; বরং ব্যবহারকারী কমতে থাকায় দিন দিন লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।

মার্কিন বিজনেস ম্যাগাজিন ফরচুন জানিয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জাকারবার্গের প্রতিষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেটা (ফেসবুকের মূল কোম্পানি) মেটাভার্স খাতে প্রায় ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার আয় হারিয়েছে।

মেটার রিয়েলিটি ল্যাবস ইউনিট প্রতিষ্ঠানটির ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রযুক্তির তত্ত্বাবধান করে। বিভাগটি জানিয়েছে, ২০২২ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৮ মাসে মেটার মোট ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার লোকসান হয়েছে। আর ২০২০ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক থেকে এই খাতে মেটার সামগ্রিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।

‘মেটাভার্স’ মূলত ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। এটি এমন একটি ত্রিমাত্রিক জায়গা, যেখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, ত্রিমাত্রিক অ্যাভাটারের (নিজের চেহারার আদলে তৈরি ইমোজি) মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

মেটাভার্স দুনিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ (এআই) রয়েছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি।
সম্ভাবনাময় এই খাতে শুরু থেকেই আগ্রহী ছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। মেটার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের রিয়েলিটি ল্যাব মেটাভার্সের দুনিয়া তৈরিতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে। এমনকি ফেসবুকের মূল কোম্পানির নাম বদলে রাখে মেটা।

কিন্তু জাকারবার্গ যে আশায় তাঁর প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন, তা এখন ব্যবহারকারীদের টানতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে বড় লোকসান সত্ত্বেও মেটার প্রধান নির্বাহী (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, তিনি মেটাভার্স ও এআই ব্যবস্থা চালু রাখাকে ‘প্রধান অগ্রাধিকার’ দিচ্ছেন।

একই সঙ্গে মেটার বিনা মূল্যে চালিত অনলাইন ভিআর ভিডিও গেম ‘হরাইজন ওয়ার্ল্ডসের’ কম ব্যবহারকারী নিয়েও চিন্তিত নন বলে জানিয়েছেন জাকারবার্গ। সম্প্রতি কোম্পানির আয় নিয়ে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘হরাইজনের জন্য এই মুহূর্তে গ্রাহক ধরে রাখাই প্রধান কাজ। এতে আমাদের ভালো অগ্রগতি রয়েছে।

পাশাপাশি এটি আমাদের মোবাইল অ্যাপ এবং আমাদের ভিআর ও মিশ্র বাস্তবতার অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি সেতু হতে চলেছে।’ এ ছাড়া মেটার আসন্ন অ্যান্ড্রয়েড উপযোগী কোয়েস্ট ৩ ভিআর হেডসেটের কথাও বলেছেন জাকারবার্গ।

তবে মূল কোম্পানি মেটা তাদের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মেটাভার্সে বর্তমান লোকসানের ধারা শিগগিরই শেষ হবে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভিআর ভিডিও গেম হরাইজন ওয়ার্ল্ডসে প্রায় ২ লাখ সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল। সর্বশেষ জুন মাসের শেষ নাগাদ তা ৫ লাখে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু অর্ধবার্ষিক শেষে মেটা তার আয় প্রতিবেদনে ব্যবহারকারীর সংখ্যা সম্পর্কে আর হালনাগাদ কোনো তথ্য দেয়নি। গ্রাহক বাড়াতে মেটা গেম খেলার বয়সসীমা ১৮ থেকে ১৩ বছরে নামিয়ে আনার কথা বিবেচনা করছে।

তবে মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা কোম্পানির ‘শিশু ও কিশোর সুরক্ষা’ নীতির কথা উল্লেখ করে মেটাকে বয়স কমানোর পদক্ষেপ নিতে নিষেধ করেছেন।