৫০টি ঋণপত্রের পাওনা নিষ্পত্তি ২ মাসে

  • মোট ৪০টি এলসির বিপরীতে সোনালী ব্যাংকে ছিল ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ডলারের। সোনালী ব্যাংকের ওয়াপদা করপোরেট শাখায় এ এলসিগুলো করা হয়েছিল।

  • বিকেবির কাছে অ্যাকর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ও অ্যান্ড এম সলিউশনের তিন এলসির বিপরীতে প্রায় ১৪ লাখ ইউরো আটকে ছিল।

ডলার–সংকটে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পাওনাও পরিশোধ হচ্ছিল না। আটকে ছিল ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রজেক্টের (আইপিপি) মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পাওনাও। ৫০টি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে সোনালী, রূপালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে আটকে থাকা মোট অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ১১ লাখ ৪০ হাজার ইউরো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ কথা জানিয়ে আড়াই মাস আগে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহায়তা চেয়েছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর। চিঠিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কার কথাও বলা হয়।

৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ও ১১ লাখ ৪০ হাজার ইউরোর সমান অর্থ পরিশোধ করছিল না সোনালী, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক।

বিদ্যুৎ আমদানি ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় উল্লেখ থাকা দরে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এ দরকে বলা হয় বিলস ফর কালেকশন বা বিসি সেলিং দর। গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো বাজারদর দাবি করছিল। ঋণপত্র খোলার সময় প্রতি ডলারের দর ছিল ৯৫ টাকা ৫ পয়সা। এ ডলারের বর্তমান বাজারদর ১০৫ টাকা।

বিউবো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ নিয়ে দুই মাস ধরে চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছিল না। বিউবো সূত্রে জানা গেছে, সুরাহা হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে।

তার আগে ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব

শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর শরণাপন্ন হয়। মন্ত্রণালয়ের চাওয়া ছিল, বাজারদরের পরিবর্তে ব্যাংকগুলো যাতে বিসি সেলিং দর অনুসরণ করে, সে জন্য তিনি যেন বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

তার আগে ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ–সচিব মো. হাবিবুর রহমানের কাছে ৫০টি ঋণপত্রের বিপরীতে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ও পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উল্লেখ করে চিঠি পাঠায় বিউবো। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিউবো গত ৩১ জুলাই বিল পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠালেও তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এতে বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল ও পণ্য (মূলধনি যন্ত্রপাতি) আমদানির বিল পরিশোধ করায় দেরি হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এতে।

বিউবোর এ চিঠি পাওয়ার তিন সপ্তাহ পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহায়তা চায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ–সচিব হাবিবুর রহমান গত ১২ অক্টোবর প্রথম আলোকে বলেন, ঋণপত্র নিষ্পত্তি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারপরও তিনি খোঁজ নেবেন।

যেসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ আটকা ছিল

বিউবোর চিঠি অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকেই বেশি অর্থ আটকে ছিল। প্যারামাউন্ট, অ্যাগ্রিকো বিডি পাওয়ার, অ্যাগ্রিকো বিডি এনার্জি, হুবেই চাপাই, চায়না এনার্জি, সিএসই এনার্জি, সিনোস্টিল রংপুর, ওরিয়ন সোনারগাঁও, ওরিয়ন রূপসা এবং লারসেন অ্যান্ড টার্বো, ফোরেইন এসআরএল

এবং আইএলএফ খুলান কনসালটেন্সির মোট ৪০টি ঋণপত্রের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকে ছিল ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ডলারের। সোনালী ব্যাংকের ওয়াপদা করপোরেট শাখায় এ ঋণপত্রগুলো করা হয়েছিল।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম গত ১১ অক্টোবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যা একটা হয়েছিল। তবে আমাদের কাছে বিদ্যুৎ আমদানি বা ভাড়াভিত্তিক ও আইপিপির কোনো বিলই আটকে নেই।’

এ ছাড়া বিকেবির কাছে অ্যাকর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ও অ্যান্ড এম সলিউশনের তিন ঋণপত্রের বিপরীতে প্রায় ১৪ লাখ ইউরো এবং রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে হুন্দাই হ্যাভি ইন্ডাস্ট্রিজ, পাওয়ার চীনা এএইচইইসিএল, চীনা এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং হিফাব ওওয়াই ফিনল্যান্ডের সাড়ে ১২ লাখ ডলার আটকে ছিল।

বিউবোর পরিচালক মো. নাছরুল হক সোনালী ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, ‘বিল পরিশোধে বিসি সিলিং দর প্রযোজ্য হবে, এ শর্তে আপনার শাখায় ঋণপত্রগুলো খোলা হয়েছিল। ঋণপত্রগুলো নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।’ আলাদা চিঠিতে বিকেবি ও রূপালী ব্যাংককেও তিনি

জানান, ঋণপত্র খোলার শর্ত অনুযায়ী কোম্পানির মাসিক বিদ্যুৎ বিলের বৈদেশিক মুদ্রার অংশ বিসি সেলিং দরের পরিবর্তে বাজারদরে পরিশোধ করার সুযোগ নেই।

ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিমের এমন বক্তব্যের কথা জানিয়ে যোগাযোগ করলে বিউবোর পরিচালক নাছরুল হক গত ১২ অক্টোবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো বারবার বাজারদরের কথা বলছিল। আমরা বলছিলাম, ঋণপত্র খোলার সময়ের দর অর্থাৎ বিসি সেলিং দর। শেষ পর্ষন্ত তারা নিষ্পত্তি করেছে। তবে আমরা চাই ভবিষ্যতে একই ধরনের সমস্যা না হোক।’