বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট ক্লাসগুলোর মধ্যে নিভৃতে জন্ম নেওয়া চতুর্থ সংযোজন কী? কার জন্য?

মানুষ মূলত যেসব জায়গায় বিনিয়োগ করে থাকে, সেগুলোর দিকে তাকালে মোটাদাগে বাংলাদেশে তিনটি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট ক্লাস পাওয়া যায়। সেগুলো হচ্ছে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা জাতীয় সঞ্চয়পত্র, সেভিংস স্কিম বা এফডিআর ও শেয়ার/স্টক। রিটার্ন, রিস্ক ও ট্যাক্স রিবেটের ভিত্তিতে বিবেচনা করলে এই তিনটি খাতের মধ্যে পার্থক্যগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়।

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনিয়োগ খাত হলো ‘ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট’ বা ‘জাতীয় সঞ্চয়পত্র’। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ একদিকে ঝুঁকিহীন, সঙ্গে উপর্যুপরি ভালো রিটার্ন এবং সর্বোচ্চ ট্যাক্স রিবেটের সুবিধা থাকায় যেকোনো বিনিয়োগকারীরই প্রথম পছন্দ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সঞ্চয়পত্র। তাহলে অন্য কিছু কেন? কারণ, সঞ্চয়পত্রে একটা নির্দিষ্ট ‘বিনিয়োগ সীমা’ বেঁধে দেওয়া আছে। ফলে অনেক বিনিয়োগকারীই তাঁদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা শেষ হয়ে গেলে বাধ্য হন অন্যান্য অ্যাসেট ক্লাস খুঁজতে।  

এ ক্ষেত্রে রিস্ক এবং রিটার্ন বিবেচনায় বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় পছন্দের খাত হিসেবে চলে আসে ‘এফডিআর’। যদিও ঝুঁকির দিক দিয়ে একে মূলত মাঝারি ঝুঁকির একটি বিনিয়োগের খাত বলা যায়। এর কারণ হচ্ছে ‘ডিফল্ট রিস্ক’। ইদানীং খেলাপি হওয়া কিছুসংখ্যক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারমিডিয়ারির ডেপোজিটরদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যর্থতাই এই ডিফল্ট রিস্কের প্রমাণ। তা ছাড়া এফডিআরে বিনিয়োগে দুটি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। একটি হলো এফডিআরে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর কোনো ট্যাক্স রিবেট পাওয়া যায় না, অন্যটি হলো অপেক্ষাকৃত কম রিটার্ন, যা অনেকাংশেই ইনফ্লেশন রেটের চেয়ে কম।

তাই অধিক রিটার্নের জন্য অনেক বিনিয়োগকারীই চলে আসেন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট ক্লাসগুলোর মধ্যে তিন নম্বরে থাকা ‘স্টক মার্কেটে’। স্টকের মূল সমস্যা হচ্ছে উচ্চ ঝুঁকি। যদিও বেশি রিটার্ন চাইলে দিন শেষে বেশি রিস্কও নিতে হয় এবং এভাবেই অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সুফল ভোগ করে আসছেন। কিন্তু শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ রিটার্ন এবং রিবেট পাওয়া গেলেও মার্কেটের উত্থান-পতনের কথা মাথায় রেখে অনেক বিনিয়োগকারীই এই খাতে বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কায় থাকেন, অনেকের থাকে অনাগ্রহ।

এই তিনটি বিষয় বিশ্লেষণ করলে একটি নতুন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট ক্লাসের প্রয়োজনীয়তা টের পাওয়া যায়, যা শেয়ারের চেয়ে নিরাপদ, যার রিটার্ন এফডিআরের চেয়ে ভালো এবং যেখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত পুরো টাকার ওপরই ট্যাক্স রিবেট পাওয়া যায়।

এই প্রয়োজনীয়তার পথ ধরেই ‘আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের প্রথম ডেট মিউচুয়াল ফান্ড-‘আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড’। বিনিয়োগের নিরাপত্তা বজায় রেখে একটা ভালো রিটার্ন এবং সর্বোচ্চ ট্যাক্স রিবেট নিশ্চিত করাই এই ফান্ডের মূল লক্ষ্য।

যেহেতু ‘আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড’ তার বৃহদাংশ (৪০ থেকে ৬০ শতাংশ) সরকারি সিকিউরিটিজ তথা ট্রেজারি বিল, ট্রেজারি বন্ডসে বিনিয়োগ করে থাকে এবং সেকেন্ডারি শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকে, তাই এই ফান্ডে শেয়ার বা স্টক-এর মতো উচ্চ ঝুঁকি নেই, বরং এফডিআরের মতোই মাঝারি। তা ছাড়া বিনিয়োগের রিটার্ন ভালো রাখতে আইডিএলসি ইনকাম ফান্ডের বাকি বিনিয়োগ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে শীর্ষ ইনভেস্টমেন্ট গ্রেডের করপোরেট বন্ডস, এফডিআর ও আইপিও। এ ছাড়া ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স-১৯৮৪ অনুযায়ী, এই ফান্ডে বিনিয়োগ ট্যাক্স রিবেটের জন্য প্রযোজ্য হওয়ায় এবং সঞ্চয়পত্রের মতো কোনো বিনিয়োগ সীমা নির্ধারিত না থাকায় বিনিয়োগকারীরা আইডিএলসি ইনকাম ফান্ডে বিনিয়োগের ওপর নিশ্চিতভাবেই সর্বোচ্চ ট্যাক্স রিবেট পেতে পারেন।

উল্লেখ্য, ৩০ জুন ২০২২-এ শেষ হওয়া বছরে বাংলাদেশের প্রথম ডেট মিউচুয়াল ফান্ড ‘আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড’ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১.৮৫ শতাংশ ফাইনাল ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, সব মিলিয়ে মোট ৪.৮৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড (৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে ঘোষিত হওয়া ৩ শতাংশ ইন্টেরিম ডিভিডেন্ডসহ)।
২৪ জুন ২০২১ থেকে ২৩ জুন, ২০২২ পর্যন্ত যাত্রা শুরুর এক বছরে আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড জেনারেট করেছে ৭.৫১ শতাংশ রিটার্ন।

সর্বোপরি বলা যায়, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁরা শেয়ারের মতো ঝুঁকি নিতে চান না এবং এফডিআরের চেয়ে ভালো রিটার্ন এবং সর্বোচ্চ ট্যাক্স রিবেট চান, তাঁদের জন্যই এই ‘আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড’

তা ছাড়া যাত্রার এক বছরের মধ্যে ফান্ড পারফরম্যান্স দিয়ে যে মাইলফলক রচিত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট ক্লাসগুলোর মধ্যে চতুর্থ এবং নতুন সংযোজন ‘আইডিএলসি ইনকাম ফান্ড’ কে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে দেবে, মূলত যাদের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগসীমা ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত।