কয়েদি ও প্রতিবন্ধীদের তৈরি পণ্যে আগ্রহ ক্রেতাদের

ছবি: খালেদ সরকার

ঐতিহ্যের জামদানি থেকে নকশিকাঁথা। বাঁশ-বেতশিল্প কিংবা জৈব সার। সবই উৎপাদিত হচ্ছে দেশের কারাগারগুলোয়। আর প্রতিবন্ধীরা তৈরি করছেন ‘উন্নতমানের’ প্লাস্টিক পণ্য ও বোতলজাত পানি। কারা অধিদপ্তর ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট মৈত্রী শিল্পের উদ্যোগে তৈরি এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়।

সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের তৈরি চার শতাধিক পণ্য নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো মেলায় অংশ নিয়েছে কারা অধিদপ্তরের ‘কারা পণ্য’। আর প্রতিবন্ধীদের তৈরি ১২০ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য ও মুক্তা পানি পাওয়া যাচ্ছে মৈত্রী শিল্পের স্টলে।

কারাপণ্যে যত বৈচিত্র্য

কয়েদিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে কারা অধিদপ্তর। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটি প্রায় ৭০ হাজার কয়েদিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মেলায় কারাপণ্য স্টলের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি জেলার রাকিব শেখ বলেন, দেশের প্রতিটি কারাগারের সামনে থাকা বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে সারা বছর কয়েদিদের তৈরি পণ্য বিক্রি হয়। আর সারা দেশের কারাগারে তৈরি এসব পণ্য একসঙ্গে বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্য মেলায়।

রাকিব শেখ জানান, নারায়ণগঞ্জ জামদানি আর কুষ্টিয়া গামছা ও লুঙ্গির জন্য বিখ্যাত। আবার নাটোর, সিলেট ও চট্টগ্রামে বাঁশ-বেতের পণ্য ভালো হয়। এভাবে প্রতিটি কারাগারেই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিখ্যাত পণ্যগুলো তৈরি হচ্ছে। পণ্যের কম দাম ও মান ভালো হওয়ায় ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে কারাপণ্য।

গত বছর কারাপণ্যের স্টলে ৪০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এ বছর বিক্রি ৫০ লাখ টাকা ছাড়াবে বলে আশা রাকিব শেখের। তিনি জানান, পণ্য বিক্রির লভ্যাংশের অর্ধেক অর্থ পাবেন কয়েদিরা।

গত শনিবার কারাপণ্যের স্টলে ঘুরে বাঁশ, বেত, চামড়া, কাঠ, পাট, পুঁতি ও কাপড়ের তৈরি বিভিন্ন পণ্য দেখা যায়। বেত ও বাঁশের তৈরি পণ্যের মধ্যে ছিল মোড়া, চেয়ার, ঢাকনা, দোলনা ও ফলের ডালা। পোশাকের মধ্যে নকশিকাঁথা, জামদানি, থ্রিপিস, লুঙ্গি, গামছা ও গেঞ্জি বিক্রি হয়। এ ছাড়া স্টলে থাকা বিভিন্ন ধরনের শোপিস, পুঁতির ব্যাগ, টিস্যু বক্স, শলার ঝাড়ু ও শুকনা খাবারের প্রতিও ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে।

চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে মেলায় ঘুরতে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা নেওয়াজ শরিফ। তিনি জানান, মান ভালো হওয়ায় তিন বছর ধরে নিয়মিত কারাপণ্যের স্টল থেকে পণ্য কিনছেন।

মৈত্রীর পণ্যে ক্রেতারা খুশি

তিন বছর আগে বাণিজ্য মেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ফাউন্ডেশন মৈত্রী শিল্পের প্লাস্টিক পণ্য কিনেছিলেন ঢাকার ফার্মগেটের গৃহিণী মীম আক্তার। এবারের মেলায় স্বজনদের নিয়ে আবার এসেছেন মৈত্রীর প্লাস্টিক পণ্য কিনতে। মীম আক্তার জানান, প্রতিবন্ধীদের তৈরি এসব পণ্যের মান খুবই ভালো। এ কারণে বাজারের অন্য প্লাস্টিক পণ্য তিনি সাধারণত ব্যবহার করেন না।

মীম আক্তারের মতো অনেক ক্রেতাই ভিড় করছেন বাণিজ্য মেলায় মৈত্রী শিল্পের স্টলে। স্টলটিতে মৈত্রী প্লাস্টিকের তৈরি ১২০ ধরনের পণ্য রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বোতলজাত মুক্তা পানিও।

স্টলটির হিসাবরক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছেন তারা। তাদের স্টলের সব পণ্যই প্রতিবন্ধীদের তৈরি। পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় ব্যয় হচ্ছে।

মৈত্রীর স্টলেই কথা হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিক্রয়কর্মী মো. সোবহানের সঙ্গে। মৈত্রী শিল্পে কাজের মাধ্যমে গত সাত বছর ধরে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি। মো. সোবহানের বলেন, ‘একসময় নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে হতো। এখন আমিই আমার পরিবারের ভরণপোষণ চালাচ্ছি।’