চিংড়ির মূল্য কমেছে সাতক্ষীরায়, তবে বেড়েছে ‘সাদা মাছের’
সাতক্ষীরা জেলায় গত বছরের তুলনায় ‘সাদা মাছ’ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন মাছের দাম চলতি বছর বেড়েছে, তবে অন্যতম প্রধান পণ্য চিংড়ি মাছের দাম পড়ে গেছে। অন্যদিকে এ বছর চিংড়ির উৎপাদন বাড়বে বলে এ খাত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। তবে তাঁরা নিশ্চিত যে সাদা মাছের উৎপাদন শেষ পর্যন্ত কম হবে।
তবে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে চিংড়ি ও সাদা উভয় ধরনের মাছেরই—এক বছরে বৃদ্ধির হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
রুই, কাতলা, ভেটকি, পারশে, টেংরা ইত্যাদি মাছ সাতক্ষীরার মৎস্য উৎপাদন অঞ্চলে সাদা মাছ হিসেবে পরিচিত।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সাতক্ষীরা জেলায় চিংড়ি চাষ হয় ৭৮ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে এবং সাদা মাছ চাষ হয় ৫৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থ বছরেও একই পরিমাণ জমিতে চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ হয়েছে।
সাদা মাছ কমেছে
কর্মকর্তারা বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ১০২ মেট্রিক টন চিংড়ি ও ৮৪ হাজার মেট্রিক টন সাদা মাছের উৎপাদন হয়েছিল। ওই বছর প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় আর সাদা মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে।
চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মাছ উৎপাদনের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জেলার মৎস্য বিভাগ দিতে পারেনি। তবে চিংড়ি চাষের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ধারণা জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। চিংড়ির উৎপাদন যেহেতু বছরজুড়েই হয়, তাই বছরের শেষ নাগাদ উৎপাদন গত বছরের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
তবে বছর শেষে সাদা মাছের উৎপাদনে ঘাটতি থেকে যাবে বলে মৎস্য খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন। জানুয়ারি পর্যন্ত সাদা মাছের উৎপাদন হয়েছে ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় ৯০ শতাংশ সাদা মাছের উৎপাদন সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
চলতি বছর প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং সাদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
বৈরি আবহাওয়া
সাতক্ষীরা শহরের কাজী আনিছুজ্জামান একজন মৎস্যচাষি। তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করছেন। এবার তিনি দেবহাটা উপজেলায় বড়শান্তা এলাকায় অন্যের জমি ইজারা (হারি) নিয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করেছেন।
প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি ইজারা মূল্য এক থেকে দুই হাজার টাকা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত শ্রমিক ও জ্বালানি খরচ এবং মাছের খাবারসহ মৎস্য চাষের সঙ্গে জড়িত সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালের থেকে চলতি বছর উৎপাদন খরচ বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। তবে সেই তুলনায় মাছের দাম বাড়েনি, বরং চিংড়ি মাছের দাম কমেছে।
কাজী আনিছুজ্জামান জানান, রুই, কাতলা, ভেটকি, পারশে ও টেংরা—এসব সাদা মাছের দাম কিছুটা বাড়লেও চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়া ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে এসব মাছের উৎপাদন কমেছে। মাছ ওজনে বাড়েনি এবং উৎপাদন কম হওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। ২০২২ সালে এসব মাছের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। চলতি বছর এই ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
সাতক্ষীরা শহরের শেখ আবু অহিদ দেবহাটা উপজেলায় সমন্বিত মৎস্য চাষ করেন। তিনি বলেন, তাঁর চিংড়ি উৎপাদন ভালো হলেও দাম কমে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ উঠবে না। সাদা মাছের দাম গত বছরে তুলনায় কিছুটা বাড়লেও আবহাওয়ার কারণে তারও উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বছর শেষে এ ক্ষেত্রে কোনোরকম উৎপাদন খরচ সম্ভবত উঠবে বলে তিনি মনে করেন।
তালা উপজেলার খলিশখালিতে ৩০ বিঘা জমিতে সাদা ও চিংড়ির সমন্বিত চাষ করেন রকিবুল ইসলাম। প্রতি একর জমি চাষ করতে গত বছরের তুলনায় তাঁর ব্যয় ৩০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সাদা মাছ উৎপাদন ভালো হলে প্রতি একরে উৎপাদিত চিংড়ি ও সাদা মাছ বিক্রি হবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায়।
সাতক্ষীরার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর মাছের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে চিংড়ির দাম শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ কমলেও সাদা মাছের দাম এক মাসে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।