ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তে তিন মাস সময় বাড়তে পারে

ভারতের আহমেদাবাদে আদানি গ্রুপের ভবন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া’ (সেবি) আদানি গোষ্ঠীর বিষয়ে হিনডেনবার্গ রিসার্চের তোলা অভিযোগ তদন্ত করছে। সম্প্রতি তারা তদন্তের জন্য আরও ছয় মাস সময় চেয়েছে দেশটির শীর্ষ আদালতের কাছে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, তারা ছয় মাস নয়, বরং আরও তিন মাস সময় দিতে চান।

গতকাল ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, পি এস নরসিমহা ও বিচারপতি জে বি পার্দিওলার বেঞ্চ বলেন, সেবিকে ছয় মাস সময় দেওয়া যাবে না। আদালত আরও বলেন, সেবির কাজে গতি আনতে হবে। আদালত আগামী আগস্টের মাঝামাঝি সময় এই মামলা শুনতে চান। এর মধ্যে সেবিকে প্রতিবেদন দিতে হবে; অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের সময় দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া আদালত ১৫ মে আরেকটি শুনানি করতে চান।

আদালত আরও জানিয়েছেন, হিনডেনবার্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এন সাপ্রের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এই সপ্তাহের মধ্যে তা খতিয়ে দেখা হবে এবং তারপরই আদালত সেবির আবেদনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন; অর্থাৎ ঠিক কত দিন তদন্তের মেয়াদ বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে। আগামী সোমবার এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।

চলতি বছরের গত ২৪ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্রের শর্টসেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এর জেরে গত ২ মার্চ এসব অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ অনুযায়ী তদন্তও শুরু করেছিল সেবি। তাদের কাছে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল।

সেবির বক্তব্য, এ বিষয়টি এতই জটিল যে মাত্র দুই মাসের মধ্যে এর তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আরও কিছুটা সময় দরকার। তারা বলেছে, অধিকাংশ তদন্তে দেখা যায়, তদন্তে যত তথ্য পাওয়া যায়, সেখান থেকে আরও নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, কারণ এত বেশি তথ্যের সমাহার একধরনের জালের মতো সৃষ্টি করে। এই কারণ দেখিয়ে তারা ছয় মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছিল। কিন্তু আদালত এখন বলছেন, ছয় মাস নয়, তিন মাস সময় দেওয়া যেতে পারে।

সেবি আরও বলেছে, হিনডেনবার্গের অভিযোগ খুবই জটিল প্রকৃতির এবং এতে অনেক ছোট ছোট লেনদেনের বিষয় আছে। ভালোভাবে তদন্ত করতে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। সেই সঙ্গে আছে কোম্পানির পেশ করা তথ্য ও বক্তব্য খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা। সে জন্য দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তারা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটি কমিশনের সদস্য। সেই হিসেবে তাদের তথ্য সংগ্রহের পথ খোলা আছে।

এদিকে আদানি টোটাল গ্যাস ও আদানি ট্রান্সমিশন মর্গ্যান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনালের (এমএসসিআই) আন্তর্জাতিক সূচক থেকে বাদ পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে মর্গ্যান স্ট্যানলির সূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বিনিয়োগকারীরা যখন বিনিয়োগের জায়গা খোঁজেন, তখন তাঁরা এই সূচকের আওতায় থাকা কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দেন। ফলে সূচক থেকে বাদ যাওয়ায় আদানিরা নতুন করে ধাক্কা খেল বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ৩১ মে থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

ভারতের সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি চলাকালে এমএসসিআই সূচক থেকে ছিটকে পড়ার তাৎপর্য আছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আদানিদের পক্ষে বিদেশি পুঁজি সংগ্রহ কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া গতকাল বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের দর ৪ শতাংশের বেশি কমেছে।

২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ রিসার্চ অভিযোগ তোলে, মরিশাসসহ বিভিন্ন দেশে ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বেআইনিভাবে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে গৌতম আদানির সম্পদের মূল্য ফুলে–ফেঁপে উঠেছে। গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির মাধ্যমে এসব কারসাজি হয়েছে। এমনকি আম্বুজা সিমেন্ট ও অ্যাসোসিয়েটেড সিমেন্ট কোম্পানি (এসিসি) কেনার পর খোলাবাজার থেকে শেয়ার কিনতেও ভুয়া কোম্পানিগুলোর পুঁজি ব্যবহৃত হয়েছে।

আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। তবে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হওয়ার পর আদানিদের বিভিন্ন কোম্পানির বাজার মূলধন ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়।