কম রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত একধরনের ‘স্লো পয়জনিং’

আহসান এইচ মনসুর

রাজস্ব খাত সংস্কারে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একধরনের উদাসীনতা আছে। গত এক দশকে রাজস্ব খাতে কার্যকর কোনো সংস্কার হয়নি। রাজনীতিবিদদের মধ্যে সংস্কারে তেমন আগ্রহ নেই।

বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিচের সারির দেশগুলোর অন্যতম। এটি একধরনের ‘স্লো পয়জনিং’–এর মতো। আমরা ক্রমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। নিজেদের ধীরে ধীরে মেরে ফেলছি। রাজনীতিবিদেরা এটা যেন বুঝতে চাইছেন না। আজ যদি রাজস্ব আদায় বেশি হতো, তাহলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি খরচ করতে পারতাম। রাজস্ব আদায় ভালো হলে এখন যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, তাতে আমরা কম চাপ অনুভব করতাম। সরকারের খরচ বেড়েছে। কিন্তু হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় খরচ করতে পারছে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। হাতে যে টাকা নেই, এখন তা টের পাওয়া যাচ্ছে।

রাজস্ব খাত, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর খাতের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এ সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা থাকতে হবে। নীতিনির্ধারকদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় তাহলেই মাঠপর্যায়ে এর সুফল মিলবে।

এনবিআরে আমূল সংস্কার হয়নি বলেই আজ রাজস্ব-জিডিপি অনুপাতে এত খারাপ অবস্থা। নানামুখী সংস্কার করতে হবে। রাজস্ব প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যানকে শুধু ভালো প্রশাসক ও সৎ হলেই হবে না, তাকে দক্ষও হতে হবে। কর প্রদানব্যবস্থা সহজ করতে অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। শুল্ক ও আয়কর—এ দুই আইন যত দ্রুত সম্ভব প্রণয়ন করতে হবে। এ ছাড়া কর অব্যাহতির যে সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। কারণ, প্রভাবশালীদের তদবিরেই এই ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়।

রাজস্ব খাত সংস্কারে এনবিআরের কোনো মহাকর্মপরিকল্পনা নেই। যা কিছু ছোটখাটো সংস্কার হচ্ছে, তা অ্যাডহক ও বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে।