রপ্তানিতে আংশিক নগদ সহায়তা পাবে পাঁচ পণ্য

যে পাঁচ পণ্যে মিলবে সহায়তা

নিট কাপড়ের টি-শার্ট, শার্ট, ট্রাউজার, ওভেন কাপড়ের জ্যাকেট ও ব্লেজার।

পণ্য রপ্তানিফাইল ছবি: প্রথম আলো

পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ও সুবিধা কমানোর দুই সপ্তাহ পার না হতেই তাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। নতুন বাজার, পোশাক খাতের পাঁচ পণ্য এবং কার্যকরের তারিখ—এ তিন বিষয়েই সংশোধনী হচ্ছে। বাকি খাতগুলোতে নগদ সহায়তা যা কমানো হয়েছে, তা–ই বহাল রাখার চিন্তা করা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানোর ঘোষণা দেয়। এত দিন বাংলাদেশ মোট ৪৩ খাতে নগদ সহায়তা দিয়ে আসছিল।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল রোববার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নগদ সহায়তার বিষয়ে কিছু সংশোধনী আনার বিষয়ে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা জানায়। চিঠিতে গভর্নরকে এ বিষয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি অনুযায়ী নতুন প্রজ্ঞাপন জারির ব্যাপারে গতকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নগদ সহায়তা কমানোসহ সংশোধনীর সিদ্ধান্ত এসেছে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। যা বোঝা গেল সরকারি সিদ্ধান্তে রপ্তানিকারকেরা নীতিগতভাবে একমত। এটা ইতিবাচক দিক।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি  

সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া আগের মতোই নতুন বাজার হিসেবে গণ্য হবে। আর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার হওয়া পাঁচটি এইচএস কোডের পণ্য আংশিক হারে হলেও নগদ সহায়তা পাবে। এ ছাড়া নগদ সহায়তা কমানোর আগের প্রজ্ঞাপন ১ জানুয়ারির পরিবর্তে কার্যকর হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। তবে আগের প্রজ্ঞাপনের মতোই আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ মোট পাঁচ মাসের জন্য নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত (গতকাল) এ বিষয়ে সংশোধনমূলক প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।’

নগদ সহায়তা কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির পাঁচ দিনের মাথায় গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, এ মুহূর্তে এটা বন্ধ রাখার জন্য। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন।’

এদিকে বিকেএমইএ গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার জন্য আবেদন জানায়।

অর্থ বিভাগ গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়। এর দুই দিন পর ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে নগদ সহায়তা ৪ শতাংশের বদলে ৩ শতাংশ হবে, আর ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকেরা অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ৩ শতাংশের বদলে ১ শতাংশ পাবেন। তবে পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার বাড়তি সুবিধা ৪ শতাংশ বহাল থাকবে।

একই প্রজ্ঞাপনে নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে সম্প্রসারণ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। নতুন বাজারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। বলা হয়, ৫ এইচএস কোডের পোশাক রপ্তানিতে আর নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না। পণ্যগুলো হচ্ছে নিট কাপড়ের টি-শার্ট, শার্ট, ট্রাউজার, ওভেন কাপড়ের জ্যাকেট ও ব্লেজার।

সংশোধনীর বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের মন্তব্য চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হবে। তবে প্রজ্ঞাপনে কিছুতেই আগের তারিখ থেকে কার্যকরের কথা বলা ঠিক হবে না। বরং আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হলে তা যথার্থ হবে। কারণ, নগদ সহায়তার ঘোষণা ছিল বলেই তার ভিত্তিতে আমরা সুতা কিনেছি। আবার ৩০ জুন পর্যন্ত বিদেশিদের কাছ থেকে ক্রয় আদেশও পেয়েছি।’

রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের পরের অবস্থান হলো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের। এ খাতে নগদ সহায়তা ১৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়। ক্রাস্ট লেদার রপ্তানিতে সহায়তা পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়। তবে ফিনিশড লেদারে ১০ থেকে কমিয়ে করা হয় ৭ শতাংশ। কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে সহায়তা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া পাটপণ্য রপ্তানিতে সহায়তা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ১২ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৭ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়।

একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্যে ১৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ২০ থেকে ১০ শতাংশ এবং শতভাগ হালাল মাংসে ২০ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়। মোটরসাইকেল, আসবাব, ব্যাটারি, আলু, চা, জাহাজ, প্লাস্টিক দ্রব্য, হিমায়িত চিংড়ি, পেট বোতল ফ্লেক্স, টুপি, শস্য ও শাকসবজির বীজ, আগর, আতর ইত্যাদি খাতেও কমানো হয় নগদ সহায়তা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, নগদ সহায়তা কমানোসহ সংশোধনীর সিদ্ধান্ত এসেছে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে। যা বোঝা গেল সরকারি সিদ্ধান্তে রপ্তানিকারকেরা নীতিগতভাবে একমত। এটা ইতিবাচক দিক। তবে আগের তারিখ থেকে কার্যকর করা নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, নতুন প্রজ্ঞাপনে তাই আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকরের কথা বলা থাকতে পারে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাত একাই পেয়েছে ৫ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।