বাজেট: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে করছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবন
ফাইল ছবি

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও বাড়াতে প্রস্তাব করা হবে। বিদ্যমান সুবিধা অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের কোনো করপোরেট কর দিতে হবে না। কিন্তু এ কর–সুবিধার মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর বাড়তে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এমন প্রস্তাব করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতেই এমন উদ্যোগ নিচ্ছে কর কর্তৃপক্ষ। কারণ, এই খাতে বিনিয়োগ আসছে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর শুল্ক-কর ছাড়ের সুবিধা তুলে নিতে হবে। তাই আপাতত ২০২৬ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এই কর–সুবিধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে এনবিআর। তবে এই খাতের উদ্যোক্তারা ২০৩০ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা চেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে বিভিন্ন খাতে দীর্ঘ সময় ধরে দেওয়া কর অব্যাহতি কমানোর কথা বলা হয়েছে। এনবিআর এ নিয়ে কাজও শুরু করেছে। এমন অবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের করছাড়ের মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণ সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের কর–সুবিধা দেওয়া উচিত। এখন তরুণ প্রজন্ম এ ব্যবসায় আসছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) সূত্রে জানা গেছে, গত তিন-চার বছরে প্রায় সাড়ে ৭০০ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নতুন প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী।

এখন বেসিসের মোট সদস্যসংখ্যা ২ হাজার ১৩৪। তাদের মধ্যে সাড়ে ৩০০ প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে থাকে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী হিসাব রক্ষণের সফটওয়্যার প্রায় পুরোটাই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বানায়।

বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি কর–সুবিধা না থাকলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে চান না। বিদেশি উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে জানতে চান, কর–সুবিধা কত দিনের। মেয়াদ অল্প দিনের হলে তাঁরা বেশি আগ্রহ দেখান না। স্টার্টআপ ব্যবসায়ও বিদেশি উদ্যোক্তারা আগ্রহী।’ তিনি মনে করেন, কর–সুবিধা অব্যাহত রাখলে এই খাতের বিনিয়োগ আসবে, নতুন কর্মস্থান হবে।

চার দাবি বেসিসের

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) মোটাদাগে চার দফা বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে বেসিস। তাদের প্রথম দাবি, ২০৩০ সাল পর্যন্ত আয়করমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের আগে কয়েক বছরের জন্য স্থিতিশীল কর–নীতি চান।

দ্বিতীয় প্রস্তাব, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অন্য খাতের মতো কোনো কাঁচামাল লাগে না। এই খাতের কাঁচামাল হলো মানবসম্পদ। তারাই সফটওয়্যার বানায়। তাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মীদের ব্যক্তিগত আয় করমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে বেসিস। বেসিস তাদের তৃতীয় প্রস্তাবে বলেছে, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি রপ্তানি করলে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। এটি বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে তারা।

আর চতুর্থ প্রস্তাবে বেসিস বলছে, দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে তৈরি সফটওয়্যার কেনে, তাদের কর প্রণোদনা কিংবা অন্য কোনোভাবে প্রণোদনা দেওয়া হোক। এটা করা হলে দেশীয় সফটওয়্যার কিনতে সবাই উৎসাহিত হবে। কারণ, প্রতিবছর ২০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যারসহ তথ্যপ্রযুক্তির পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

দেড় শ কোটি ডলারের রপ্তানি

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানি ক্রমে বাড়ছে। মূলত নানা ধরনের সফটওয়্যার রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো দেড় শ কোটি ডলার রপ্তানি করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তি–সংক্রান্ত আউটসোর্সিংয়ের কাজও করে থাকে। বড় বড় করপোরেট গ্রুপও আউটসোর্সিং খাতে বিনিয়োগ করছে।

কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী ব্যক্তি পর্যায়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজও করেন। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এমন ১০ লাখ তরুণ-তরুণী বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আনেন।

বেসিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বছরে ৫০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করেছে। ২০৩১ সাল নাগাদ রপ্তানি বাড়িয়ে ২ হাজার কোটি ডলার করতে চায় বেসিস। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত জাতীয় রপ্তানি–সংক্রান্ত কমিটির সভায় বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

বর্তমানে এই খাতে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ–ছয় হাজার কোটি টাকা।