গাজীপুর-আশুলিয়ায় বন্ধ পোশাক কারখানার সংখ্যা ৪২১

বেতন বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভ।
প্রথম আলো

শ্রমিক আন্দোলনের মুখে গাজীপুর ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধের সংখ্যা বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও গাজীপুর ও আশুলিয়ায় কমপক্ষে ৪২১টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক কারখানা গত মঙ্গলবার থেকে বন্ধ।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সারেয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, জানা মতে, আজ গাজীপুর শহরের আশপাশের এলাকা ছাড়াও কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও কালিয়াকৈরে ৩৮৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে শিল্প পুলিশ-১–এর (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ থেকে ৩৫টি পোশাক কারখানার ছুটির নোটিশ পেয়েছি আমরা। আবার কিছু কারখানায় আজ সকালে কাজ শুরু হলেও পরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

অবশ্য গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক কারখানা আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে নোটিশ দিয়েছে। আজ ছয়টি কারখানার শ্রমিকেরা সকালে কাজে এলেও ঘণ্টাখানেক পর কাজ বন্ধ করে তাঁরা কারখানা থেকে চলে যান।

চলতি বছরের এপ্রিলে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে সরকার নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি দাবি করে প্রস্তাব দেন। তার বিপরীতে মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার ৪০০ টাকার মজুরি প্রস্তাব দেয়।

পরদিন থেকেই গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন নামেন। পরে আশুলিয়া-সাভারেও শ্রম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। গত সোমবার দুজন শ্রমিক নিহত হন। তারপর মঙ্গলবার আন্দোলন আরও সহিংস হয়ে উঠলে বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, মালিকেরা চাইলে কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন, তারপরই কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকেরা।

এদিকে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১০ হাজার ৪০০ টাকার পরিবর্তে নতুন মজুরি প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ, যদিও প্রস্তাব কত টাকার হবে, সেটি তারা জানায়নি। তবে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মজুরি চূড়ান্ত হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত হবে। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের গতকাল বুধবারের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, কারখানা বন্ধ থাকায় গতকাল গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। তবে আজ সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে মহাসড়ক থেকে তাঁদের সরিয়ে দেয়।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা গতকাল সন্ধ্যার পর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মালিকেরা মন্ত্রীর কাছে বাড়তি নিরাপত্তা দাবি করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে, সেগুলো শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আগামী শনিবার থেকে বন্ধ সব কারখানা খুলবে। তখন কোনো শ্রমিক যদি কাজ না করে আন্দোলন করেন, তাহলে বিষয়টি বেআইনি ধর্মঘট হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকার মজুরি চূড়ান্ত করবে। তার আগে আন্দোলন অযৌক্তিক।