মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে

বিলাসপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক সংকটের পরও দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা দিয়ে বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে আগের বছরের (২০২১-২২) একই সময়ের তুলনায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে গতি এসেছে। তবে ব্যবহারকারীরা বলছেন, সরকারি পর্যায়ে আমদানির সার ও গম, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল, কয়লা ও গাড়ি আমদানির ওপর নির্ভর করে আমদানি বাড়ছে এই বন্দর দিয়ে।

পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলায় জাহাজের আগমন বেড়েছে। রূপপুর, রামপাল, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুসহ দেশের সব মেগা প্রকল্পের মালামাল আসছে মোংলা বন্দর দিয়ে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, চেয়ারম্যান, বন্দর কর্তৃপক্ষের ইনজামামুল হক, বাগেরহাট

মোংলা কাস্টম হাউসের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে (১ জুলাই থেকে ১৬ অক্টোবর) মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয়েছে ৪০ লাখ ৪৮ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয়েছিল ২২ লাখ ৮৮ হাজার টন। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার হার প্রায় ৭৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানির তালিকায় শীর্ষে আছে সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল, এলপিজি, কয়লা, সরকারের পর্যায়ে আমদানি

করা সার, গম ও বিভিন্ন প্রকল্পের সরঞ্জাম। এসব পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনও বেড়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলায় জাহাজের আগমন বেড়েছে। রূপপুর, রামপাল, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুসহ দেশের সব মেগা প্রকল্পের মালামাল আসছে মোংলা বন্দর দিয়ে। আমদানির চাপ মোকাবিলায় খনন কাজসহ বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ চলছে বলে তিনি জানান।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মালামাল আমদানির কারণে মোংলা বন্দর এখনো টিকে আছে। ব্যবসায়ীরা সে অর্থে এখনো মোংলামুখী হননি। বন্দরের সুযোগ-সুবিধা ও কাস্টমস সেবার মান বাড়ালে এই বন্দর ব্যবহারে এগিয়ে আসবেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও মোংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের মতো মোংলা বন্দর ও এখানকার কাস্টমস ভালো সেবা দিতে পারছে না। পদ্মা সেতু চালুর পর বেশি সুফলও পাচ্ছে চট্টগ্রাম। এর প্রধান কারণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতসুবিধা। তবে মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়লেও তা মূলত সরকারি আমদানির পণ্য।

বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, মোংলা মূলত আমদানিনির্ভর বন্দর। টাকার অঙ্কে মোট বাণিজ্যের ৯৬ শতাংশ-ই আমদানি পণ্য। পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি শুরু হওয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধির আশা তৈরি হয়েছিল। তবে কনটেইনারবাহী জাহাজের চলাচল নিয়মিত না থাকায় সেই পরিকল্পনা অগ্রসর হয়নি, যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার জাহাজ চলাচলের সুবিধা বাড়াতে যন্ত্রপাতি সংযোজনসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে।

দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরের মধ্যে পণ্য পরিবহনের সাপেক্ষে মোংলার অবস্থান দ্বিতীয়। দ্বিতীয় অবস্থান থাকলেও সমুদ্রপথে বাণিজ্যে মোংলার অংশীদারি খুবই কম। কনটেইনার পণ্যের মাত্র ১ শতাংশ আনা-নেওয়া হয় এই বন্দর দিয়ে। খোলা পণ্যের ৭ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয় এই বন্দর দিয়ে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন মনে করেন, জেটির সামনে পানির গভীরতা বাড়ানো দরকার। তাহলে বর্তমানের তুলনায় বেশি পণ্য নিয়ে জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো যাবে। অর্থাৎ যত বেশি বন্দরসুবিধা থাকবে, ততই বন্দর ব্যবহারে এগিয়ে আসবেন ব্যবহারকারীরা।