রাজস্ব খাতের সংস্কার নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নতুন কোনো উপদেশ দেয়নি। অথচ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এক দশক ধরে রাজস্ব খাতের সংস্কারের কথা বলে আসছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বহুদিন ধরেই এ দাবি জানাচ্ছে। তখন এসব সংস্কার করলে এখন অন্তত আইএমএফের শর্তের বেড়াজালে পড়তে হতো না।
করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে করব্যবস্থার অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তাদের দুর্নীতিই বড় বাধা। অসৎ কর্মকর্তারাই অটোমেশনের বিরুদ্ধে কাজ করেন। তাঁরা মনে করেন, অটোমেশন হলে তাঁদের অবৈধ আয় কমে যাবে। তাই যেকোনো মূল্যে করব্যবস্থাকে পুরোপুরি অটোমেশন করতে হবে। এটি তখনই কার্যকর হবে, যখন কম্পিউটারের পেছনে কোনো মানুষ থাকবে না। একটা ফাইল একজন কর্মকর্তা একবারই দেখবেন। তারপর সেই ফাইল আরেকজন কর্মকর্তা দেখবেন। তাহলেই টেবিলের নিচ দিয়ে অবৈধ লেনদেন বন্ধ হবে।
দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭০ লাখ। রিটার্ন জমা দেন বছরে ২০-২৪ লাখ টিআইএনধারী। বাকিরা কি ভুয়া। অবশ্যই না।
আয়কর আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। এটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সংসদে পাস হওয়ার কথা ছিল। সেই আইন সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা অন্ধকারে ছিলেন। অনেক সাংসদও জানতেন না। পরে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে পাস হয়নি। গত এক বছরে এ আইন নিয়ে আলোচনায় ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। তাতে একটা পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। আইনে কর কর্মকর্তাদের আইনবহির্ভূত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রতিষ্ঠানকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবেন। তৃতীয় গ্রেডের একজন কর্মকর্তাকে যদি এই ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে সরকার সেই ৫০ লাখ টাকার দেখা হয়তো কখনোই পাবে না। তার আগেই ভিন্ন উপায়ে সেটি সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
দেশে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৭০ লাখ। রিটার্ন জমা দেন বছরে ২০-২৪ লাখ টিআইএনধারী। বাকিরা কি ভুয়া। অবশ্যই না।
জিডিপিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অবদান ৪৩ শতাংশ। আর ৯২ শতাংশ কর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আদায় হয়। বাকি ছয় বিভাগ থেকে আসে মাত্র ৮ শতাংশ। এখন আইএমএফ উপজেলা পর্যায়ে কর কার্যালয় খোলার কথা বলছে। আমার তো মনে হয়, উপজেলার আগে জেলা এবং তারও আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় শহর থেকে কর আদায়ে জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ভ্যাটের ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে চান না। শুধু আয়কর দিয়ে দেশ চলে না। তাই ভ্যাটব্যবস্থাও অটোমেশন করতে হবে। আমি মনে করি, আয়কর ও ভ্যাটে অটোমেশন পদ্মা সেতু নির্মাণের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অটোমেশন হলে করদাতারা আরও কয়েকটি পদ্মা সেতু করার অর্থ জোগান দিতে পারবেন।
রিজওয়ান রাহমান
সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার