এগিয়ে চলছে ঢাকার বাইরের আবাসন খাত

খন্দকার আনিসুর রহমান, সাবেক রেল কর্মকর্তা। চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকেছেন। অবসরের পর সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে নিজের একটি স্থায়ী আবাস কেনার চেষ্টা করছেন। সন্তানেরা চাচ্ছেন, ঢাকাতেই ফ্ল্যাট কিনে থাকুক তাঁদের মা–বাবা। কিন্তু খন্দকার আনিসুর রহমানের ইচ্ছা জন্মস্থান রাজশাহীতে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করার। খন্দকার আনিসুর রহমানের মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য নিজ এলাকায় ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে চান।

বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার বাইরে বিস্তার শুরু করেছে আবাসন ব্যবসা। বিভাগীয় শহরগুলোর পাশাপাশি জেলা শহরেও শুরু হয়েছে আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ।

নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো নগরের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন উপজেলায়। ঢাকার পর রিয়েল এস্টেট খাতের সর্বোচ্চ বিকাশ হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম শহরে যেমন দেখা মেলে ছিমছাম সাজানো–গোছানো বাড়ি বা ভিলার, তেমনি দেখা মেলে সুউচ্চ আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট কিংবা আকাশছোঁয়া বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ভবনেরও। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা রিহ্যাবের সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামে রয়েছে ৮৩টির বেশি আবাসন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান। রিহ্যাবের চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাদের ২৫০টির বেশি প্রকল্পের কাজ চলমান।

র‍্যাংকস এফসি প্রোপার্টিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর শাহরিয়ার রিমন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসার সূচনা আইডিয়াল হোমের হাত ধরে। পূর্ব নাসিরাবাদে ‘আপন নিবাস’ নামে একটি প্রকল্প দিয়ে ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামে প্রথম কোনো অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপরই নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে এসে নতুন করে চট্টগ্রামে আবাসন ব্যবসার পালে লাগে সুবাতাস ইকুইটি ও স্যানমারের হাত ধরে। চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রথম সারির আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে র‍্যাংকস এফসি প্রোপার্টিজ, স্যানমার প্রোপার্টিজ, ইকুইটি, ফিনলে প্রোপার্টিজ, সিপিডিএল, বিটিআই, এএনজেড প্রোপার্টিজ, ইপিক প্রোপার্টিজ, নাভানা রিয়েল এস্টেট, কনকর্ড ও জুমাইরা হোল্ডিং অন্যতম।

চট্টগ্রামের তুলনামূলক গোছানো এলাকাগুলো খুলশী, নাসিরাবাদ হাউজিং, জিইসি মোড় এবং এর আশপাশ মেহেদীবাগ, জামালখান, লালখানবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ ইত্যাদি এলাকায় চোখে পড়ে অসংখ্য ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টসমৃদ্ধ আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্পের। নগরীর আশপাশে আছে ল্যান্ড প্রজেক্টও। অন্যদিকে পাহাড়তলী, কাট্টলী, বাকলিয়া, মুরাদপুরের আশপাশ, অলংকার, সাগরিকা রোড ও বিবিরহাটের মতো এলাকায় কিছুটা অপরিকল্পিত নগরায়ণ হলেও অসংখ্য মানুষের বাস এখানে। আর বাণিজ্যিক এলাকার কথা বলতে গেলে মুরাদপুর, ও আর নিজাম রোড, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, ২ নম্বর গেট, বায়েজিদ, টেক্সটাইল, অক্সিজেন ও বড় পোলের মতো জায়গা উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামে বর্তমানে ১ থেকে ৪ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন ৫৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাট রয়েছে চট্টগ্রামে।

শিক্ষানগরী রাজশাহীতেও আবাসন খাত ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন (রেডা) আবাসন খাত সবার কাছে তুলে ধরার জন্য আবাসন মেলার আয়োজন করে।

রেডার সদস্য ২৭টি প্রতিষ্ঠানই রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসা করছে। রেডার সাধারণ সম্পাদক ও আল-আকসা প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, রাজশাহীতে মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের বসবাস। তাই তাঁদের টার্গেট করেই আবাসন ব্যবসা পরিচালিত হয়। মধ্যবিত্তরা যেন কিনতে পারেন, সে অনুযায়ী ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম নির্ধারণ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীতে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট তৈরি করে থাকে। ফ্ল্যাটের দাম প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান কাজী জানান, ৩৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে রাজশাহীতে ভালো মানের ফ্ল্যাট পাওয়া যায়।

এ ছাড়া বিভাগীয় শহরের মধ্যে বরিশাল, সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রংপুরে ধীরে ধীরে আবাসন ব্যবসার বিকাশ হচ্ছে। আর জেলা শহরের মধ্যে কুমিল্লা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, নরসিংদীসহ প্রায় প্রতিটি বড় জেলায় আবাসন খাত গড়ে উঠছে।