ভ্যাট আরোপে পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক–কর হ্রাস বা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আবার শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়। বাজেটের এসব উদ্যোগের প্রভাব কী হতে পারে—তা নিয়ে কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিমত নিয়ে এবারের মূল আয়োজন।

মো. রাফেউজ্জামান সভাপতি, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)

আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী পর্যটন খাত নিয়ে বেশ কিছু ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। এগুলোকে পর্যটন খাতের সব অংশীজনই স্বাগত জানিয়েছে। তবে এ খাতের জন্য উদ্বেগজনক কিছু বিষয়ও রয়েছে সেখানে। প্রস্তাবিত বাজেটে ট্যুর অপারেটর সেবার ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে (মূসক বা ভ্যাট) যে অব্যাহতি রয়েছে, তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে বিদ্যমান ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

ট্যুর অপারেটর সেবায় ভ্যাট কার্যকরের সিদ্ধান্ত দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশের অনুকূল নয়; বরং এতে এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা মনে করি, এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সার্বিকভাবে ভ্রমণ ব্যয় বাড়বে; পর্যটকদের ওপর খরচের বোঝা তৈরি হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পর্যটনে আমাদের অবস্থান সর্বনিম্ন পর্যায়ে। তবে এ খাতের সম্ভাবনা অনেক আছে। ফলে পর্যটনসংশ্লিষ্ট কোনো খাতেই ভ্যাট বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আগে খাতটিকে টেকসই হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

ট্যুর অপারেটরেরা পর্যটনের বিভিন্ন উপখাত থেকে আলাদা উপাদান নিয়ে ভ্রমণ প্যাকেজ তৈরি করেন। যেমন আমরা আবাসনশিল্প থেকে পর্যটকের থাকার ব্যবস্থা করি, ক্যাটারিং থেকে খাবার নিই ও পরিবহন খাত থেকে যানবাহন বা টিকিটের ব্যবস্থা করি। সব ক্ষেত্রেই আগে ভ্যাট পরিশোধ করা হয়। ফলে ভ্রমণ প্যাকেজের ওপর আবার ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে একই জিনিসের জন্য দুবার ভ্যাট দিতে হবে। এটি অন্যায্য।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) অধীনে থাকা সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়া ইকোট্যুরিজম পার্কের কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে, যা আরও বেগবান করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটে পর্যটন খাতে বরাদ্দ কমেছে। যা–ও বরাদ্দ পাওয়া যায়, তার সিংহভাগ চলে যায় পরিচালন ব্যয়ে। ফলে পর্যটনের বিকাশে প্রশিক্ষণ, ব্র্যান্ডিং ও বিপণনের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

পর্যটন খাত একটা দেশকে আর্থসামাজিকভাবে অনেক উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে দেশে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা বছরে প্রায় এক কোটি। আর বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। একজন পর্যটনকর্মী হিসেবে মনে করি, দেশে যেভাবে পর্যটন এগোচ্ছে, সে জন্য সহায়ক পরিবেশ রাখা উচিত। ট্যুর অপারেটরদের বিভিন্ন লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো করা হলে বেশিসংখ্যক লোক পর্যটন খাতে সম্পৃক্ত হবে।

সেবার ওপরে যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা পরিমাণে কম নয়। এতে পর্যটনসেবার খরচ বেড়ে যাবে। আশা করছি, সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

মো. রাফেউজ্জামান

সভাপতি, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)