চট্টগ্রামে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন শুরু করেছে সীমার্ক গ্রুপ

ভেনামি চিংড়ি প্রকল্প সম্পর্কে জানাতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে সীমার্ক ভেনামি ফার্মছবি সংগৃহীত

দেশে উচ্চফলনশীল প্রজাতির ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন শুরু করেছে সীমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সীমার্ক ভেনামি ফার্ম। কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত খামারটিতে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে নিবিড় পদ্ধতিতে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন শুরু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীমার্ক গ্রুপের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, দেশের প্রথম ভেনামি চিংড়ি প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হলো সীমার্ক ভেনামি ফার্ম। সীমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ এই ভেনামি চিংড়ির খামার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে খামারটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

চিংড়ি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সনাতন উপায়ে খামারে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ৪০০ থেকে ৫০০ কেজির মতো বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায়। আর নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে দেড় থেকে দুই টন পর্যন্ত বাগদা উৎপাদন করা সম্ভব। সেখানে ভেনামি চিংড়ি চাষ করা হলে প্রতি হেক্টরে নিবিড় পদ্ধতির দ্বিগুণের বেশি চিংড়ি পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ ভেনামির প্রজননের হার অনেক বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে সীমার্ক ভেনামি ফার্ম জানায়, থাইল্যান্ডের চারোয়েন পোকফান্ড ফুডসের (সিপিএফ) প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদেরা এই প্রকল্পে কাজ করেছেন। প্রকল্পটিতে আধুনিক সব বৈজ্ঞানিক কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন বঙ্গোপসাগর থেকে সমুদ্রের পানি সংগ্রহ করে অটো কেমিক্যাল ডোজিং পদ্ধতিতে পুকুরে পরিশোধন করা হয়। এর মাধ্যমে সমুদ্রের পানির সঙ্গে আসা সব ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দূষণ রোধ করা যায়। খামারে কয়েক ধরনের পুকুর রয়েছে, যেগুলোকে দূষণ ও পরিবেশগত অনিশ্চয়তা থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাশাপাশি খামারে একটি ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগার রয়েছে; যেখানে পানির ফিজিকোকেমিক্যাল ও মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। খামারে কোনো নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়া বর্জ্য পানি ট্রিটমেন্ট না করে পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয় না।

সীমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। আমাদের সংগ্রহ করা চিংড়ির শতভাগ ট্রেসেবিলিটি রয়েছে।’ উখিয়ার খামারটি ছাড়া বর্তমানে টেকনাফে আরেকটি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে বলে জানান ইকবাল আহমেদ। তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে টেকনাফে ভেনামি উৎপাদনে যাওয়া যাবে।

ভেনামি চিংড়ি একটি উচ্চফলনশীল চিংড়ি। এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি চিংড়ির প্রজাতি। উচ্চ ফলনের পাশাপাশি এর রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্যও এটি এখন সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই ভেনামি জাতের। দেশে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয় ২০১৯ সালে। চার বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর অনুমতি দেয় সরকার।