ঋণ পাওয়াই এসএমই খাতের বড় সমস্যা

দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে প্রায় ৭৮ লাখ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মোট দেশজ অর্থনীতিতে (জিডিপিতে) এই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। তারপরও প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সুবিধার কারণে এই খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত তিন দিনের ব্যবসা সম্মেলনের শেষ দিনের এক সেমিনারে এমন তথ্য জানিয়েছেন আলোচকেরা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সাবেক সভাপতি কামরান টি রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান।

সেমিনারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসএমই খাতের জন্য সরকার দ্রুত ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। তবে এসএমই উদ্যোক্তার মোট সংখ্যার তুলনায় এটি অপর্যাপ্ত। এ ছাড়া ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা আরও সহজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ছাড়া দেশে এসএমই খাত নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যেরও ঘাটতি রয়েছে বলে জানান খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় উদ্যোক্তাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. সামীর সাত্তার বলেন, এসএমই খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থায়ন না পাওয়ায় তারা প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য কাস্টম শুল্ক, কর ও ভ্যাট ব্যবস্থা অনুকূলে নয়। সরকার যেসব কর-ভ্যাট সুবিধা দেয় তার বেশির ভাগই পান বড়রা। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যাংক থেকে ঋণপ্রাপ্তি।

তবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু যৌক্তিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, এ ক্ষেত্রে নতুন ও ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য কাস্টমাইজড পদ্ধতি রাখা যেতে পারে।

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামী আহমেদ বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে স্টার্টআপ খাত কাজ করছে। কিন্তু এসএমই খাতের মতো ছোট স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররাও ঋণ পেতে সমস্যায় পরেন।

ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো.হাসিম বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নে দুটি বিষয় প্রয়োজন- এক. ট্যাক্স  রিফর্ম ও দুই. সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা। এ দুটি নিশ্চিত করা গেলে এই খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি সম্ভব বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের এসএমই প্রতিষ্ঠানের একটা বড় অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতের। তাদের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা গেলে জিডিপিতে তাদের অবদান বাড়বে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অর্থায়ন সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে ২০ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন তহবিল তাদের জন্য অনেক সহায়ক ছিল।  

মূল প্রবন্ধে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, সারা দেশে সিএমএসএমই খাতে প্রায় ৭৮ লাখ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থান দূর করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।

এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন উল্লেখ করে মফিজুর রহমান বলেন, ঋণ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন অসুবিধার কারণে এসএমই খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য সরকারকে আরও নীতি সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।