সাত নিত্যপণ্য সরবরাহের আশ্বাস ভারতের মন্ত্রীর

ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক বৈঠকের এক ফাঁকে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তিন দিনের বি-২০ সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীও এ সম্মেলনে অংশ নেন
ছবি: এএফপি

বাংলাদেশের জন্য যে সাত পণ্যে কোটা রাখার আশ্বাস দিয়েছে ভারত, সেসব পণ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর থেকে অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানান। ভারতের দিক থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী সাত ধরনের নিত্যপণ্য সরবরাহের আশ্বাস পেলেও পাটজাত পণ্যের ব্যাপারে আশ্বাস মেলেনি।

ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিত জি-২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক বৈঠকের এক ফাঁকে গত শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে টিপু মুনশি এসব অনুরোধ জানান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। ২৪-২৫ আগস্ট জয়পুরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অংশ নিয়ে গতকাল শনিবার আলাদা করে অনুষ্ঠিত বিজনেস সামিটেও বক্তব্য দেন টিপু মুনশি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
ফাইল ছবি
দিল্লির ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আমার আলাদা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে তাঁরা ইতিবাচক। নিত্যপণ্যে কোটা রাখা ও পণ্যে শিগগির ছাড় পাওয়া যাবে, আশ্বাস পেয়েছি।
টিপু মুনশি, বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল ভারত থেকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিল্লির ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আমার আলাদা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে তাঁরা ইতিবাচক। নিত্যপণ্যে কোটা রাখা ও পণ্যে শিগগির ছাড় পাওয়া যাবে, আশ্বাস পেয়েছি। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যে যে অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক বজায় রেখেছে, তা তুলে নেওয়ারও অনুরোধ করেছি। তবে ভারত মনে হয় না এ সময়ে পাটজাত পণ্যের অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করবে।’

আট মাস আগে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে টিপু মুনশি ভারত থেকে আট ধরনের নিত্যপণ্যে কোটা সুবিধা চান। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর বহুবার চিঠি চালাচালি হয়। সংশোধিত হয় পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ। সর্বশেষ ২০ আগস্ট নতুন করে ভারতের কাছে চাওয়া হয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টন চাল, ২৬ লাখ টন গম, ১০ লাখ টন চিনি, ৮ লাখ টন পেঁয়াজ, ৫০ হাজার টন আদা, ৭০ হাজার টন রসুন ও ১ লাখ টন মসুর ডাল।

জানা গেছে, পীযূষ গয়ালের সঙ্গে জয়পুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে টিপু মুনশি জানান, সম্প্রতি পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দামের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জবাবে পীযূষ গয়াল তাঁকে বলেন, বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহের ঘাটতির পাশাপাশি দামও বেড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, প্রতিকূল আবহাওয়া ও খাদ্যের মূল্যস্ফীতির কারণে ভারতও কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ঘাটতিতে ভুগছে। এ কারণে ভারত সরকারকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন শিগগির সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারত। পাঁচ বছর এ শুল্ক আরোপ করার পর বাংলাদেশ আশা করেছিল, এ বছর তা উঠিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এ শুল্ক আরোপের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়েছে ভারত। প্রতি টন পাটজাত পণ্যে অ্যান্টি–ডাম্পিং শুল্ক হার ৬ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত।