পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের পর ভারতে প্রতিবাদ, নিলাম বন্ধ নাশিকে

পেঁয়াজ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দেশটির ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাশিকে ব্যবসায়ীরা গত সোমবার সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা পেঁয়াজের নিলাম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখবেন। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার গতকাল মঙ্গলবার সরাসরি কৃষকদের কাছে থেকে পেঁয়াজ ক্রয় অভিযান শুরু করে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, যেসব বাজারে নিলাম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে লাসালগাঁও। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় পাইকারি পেঁয়াজের বাজার। নাশিক জেলা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতি এই প্রতিবাদের ডাক দেয়। সমিতি বলেছে, সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নেবেন না।

অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়তে থাকার কারণে গত শনিবার ভারতের কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে সরকারি ঘোষণায় জানানো হয়। তবে ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা মনকরেন, এর ফলে তাঁদের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের পর ব্যবসায়ী ও কৃষকদের প্রতিবাদ শুরু হলে কেন্দ্রীয় খাদ্য, ভোক্তা ও বাণিজ্যবিষয়কমন্ত্রী পিয়ুশ গয়াল জানান যে সরকার রেকর্ড দামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনবে। তিনি বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনকারীদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে।

কৃষকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনতে সরকার প্রতি ১০০ কেজির দাম নির্ধারণ করেছে ২ হাজার ৪১০ রুপি। ভারত সরকারের লক্ষ্য পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজের মজুত গড়ে তোলা। মহারাষ্ট্রে হওয়া প্রতিবাদকে ‘রাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে পিয়ুশ গয়াল সাংবাদিকদের বলেছেন, আতঙ্কিত হয়ে কৃষকদের পেঁয়াজ বিক্রি করার কোনোই প্রয়োজন নেই।

সাম্প্রতিক সময় ভারতে ভোক্তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির ভেতরে রয়েছেন। জুলাইয়ে খুচরা মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশে উঠেছে, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শুধু সবজির দামই বেড়েছে ৩৭ শতাংশ।

এদিকে ইকোনমিক টাইমসের খবরে জানানো হয়েছে যে ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করার পর দেশটির পেঁয়াজ রপ্তানিকারকেরা সরকারের কাছে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, এতে সবার স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
নিজেদের বাজার সামাল দিতে ভারত এর আগে গম ও চাল রপ্তানি সীমিত করেছে, যার প্রভাব ইতিমধ্যে বাজারে অনুভূত হচ্ছে। এরপর তারা পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এ

শুল্ক আরোপ করে।

ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম গত দুই মাসে চার গুণ বেড়েছে। তারপর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করে, যদিও তারা মূল্যস্তর বেঁধে দেয়নি। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে কোনো কোনো অংশীজন ও বন্দর অন্যায্য সুবিধা পেতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি হয়। ফলে একেক বন্দর যদি একেকভাবে মূল্য নির্ধারণ করে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে কোনো পক্ষ বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। ভারতের হর্টিকালচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত শাহ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছেন, রপ্তানি শুল্ক হিসাবের জন্য সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেওয়া দরকার, তা না হলে একেক বন্দরে একেকভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হতেপারে।

ভারতের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাল, গম ও এখন পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বা এসব রপ্তানি সীমিত করার কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে, সেই সঙ্গে এসব পণ্যের মজুত বেড়ে যাচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ২০ জুলাই স্বল্প সময়ের নোটিশে বাসমতি ভিন্ন অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। তবে বিভিন্ন বন্দরে অবিক্রীত চালের স্তূপ জমে যাচ্ছে, এমন খবরের পর কেন্দ্রীয় সরকার গত সপ্তাহে চাল রপ্তানিতে কিছুটা ছাড় দেয়।

গত সপ্তাহে ভারতের বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক সংগঠন আইটিসি জানায়, গম ও চাল রপ্তানি সীমিত করার কারণে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে কৃষির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা কিছু সুযোগ হারিয়েছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত বছরের মে মাসে গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।