শ্রীপুরের ডিমের দাম নির্ধারণ করেন ঢাকার আড়তদারেরা

গাজীপুরের একটি ডমের দোকানে কেনাবেচা চলছে
প্রথম আলো

ডিম উৎপাদনে দেশের শীর্ষস্থানীয় এলাকাগুলোর মধ্যে শ্রীপুর অন্যতম। এখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগীর হাত ঘুরে ডিম যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি পাইকারি বাজারে। এ এলাকা থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ লাল ও সাদা ডিম রাজধানীতে সরবরাহ করা হয়।

গত ১৫ দিনে দেশের বৃহৎ এ উৎপাদন এলাকায়ও চড়া দামে কেনাবেচা হচ্ছে ডিম। অথচ ডিম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কোনো সামগ্রীর দামই নতুন করে বাড়েনি। তাহলে হঠাৎ করে কেন ডিমের এ বাড়তি দাম? সরেজমিনে শ্রীপুরের প্রান্তিক পর্যায়ের পাঁচটি খামার ঘুরে ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিমের দাম ঠিক করেন মূলত রাজধানীর আড়তমালিকেরা। এ ক্ষেত্রে দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় কম হলেও খামারিদের লোকসানে ডিম বিক্রি করতে হয়। দামের ক্ষেত্রে তাঁদের কিছুই করার থাকে না।

খামারিরা জানান, বাজারে এখন মৌসুমি সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে। যেসব সবজি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর দাম বাড়তি। তাই বিকল্প হিসেবে নিম্ন, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ ডিমের প্রতি ঝুঁকছেন। আবার অত্যধিক গরমে মুরগি মারা যাওয়ায় উৎপাদনও কমেছে। এতে ডিমের চাহিদাও বেড়ে গেছে। এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

উপজেলার তানিশা পোলট্রি খামারের উদ্যোক্তা মো. আবু তালেব বলেন, প্রতিদিন সকালে রাজধানীর আড়ত থেকে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়। সেই দামেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে আমরা ডিম বিক্রি করি। লোকসান হলেও খামারিদের ওই দামে ডিম বিক্রি করে দিতে হয়। কারণ, খামারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ দিন ডিম সংরক্ষণ করা যায়।

উপজেলার গাড়ারণ গ্রামের সালমা পোলট্রির মালিক এম এম মতিন প্রথম আলোকে বলেন, বছরে প্রায় আট মাস লোকসানে ডিম বিক্রি করেন খামারিরা। তিন-চার মাস মোটামুটি ভালো দাম পাওয়া যায়। দাম ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রান্তিক খামারিরা মূলত অসহায়। ডিমের বাজারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্য উৎপাদন, ওষুধ আমদানির পাশাপাশি ডিম উৎপাদন করছে। তাই তারা কম দামে ডিম বিক্রি করেও কিছু হয়তো লাভ করতে পারে। কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

শ্রীপুরের প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে পাইকারিতে ডিম কেনেন উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকার আহাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল্লাহ আল আহাদ। তিনি বলেন, ‘ঢাকার আড়তদারদের ঠিক করে দেওয়া দামে আমরা খামারিদের কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতি ১০০ ডিমের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে ৩০ টাকা কমিশন যুক্ত করে আমরা তা ঢাকার বাজারে সরবরাহ করি।’

উপজেলার সিংদীঘি গ্রামের আজিরন পোলট্রি খামারের মালিক মো. তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডিম উৎপাদনের সব উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এখন যে দামে খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন, তাতে অনেকের লোকসান হচ্ছে।