বাজারে ‘আসল’ জার্সি নেই, যে কারণে জমেনি ‘নকল’ জার্সির বেচাকেনাও

চলছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তবে এবার এখনো জমেনি জার্সির ব্যবসা। এ বছর জার্সির কোনো স্বত্ব বিক্রি করেনি বিসিবি। ফলে বাজারে যেসব জার্সি বিক্রি হচ্ছে, তার বেশির ভাগই নকল। বাংলাদেশ দলের জার্সি দেখছেন একজন ক্রেতা। গতকাল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর একটি দোকানে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্লেয়ার্স এডিশনের অফিশিয়াল বা আসল জার্সি বিক্রির স্বত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়নি। এতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নকল বা কপি করা জার্সিতে সয়লাব হয়ে গেছে দেশের বাজার।

এমনকি প্লেয়ার্স এডিশনের জার্সি বলে যেসব জার্সি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তা–ও নকল। এদিকে বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেলেও এখনো জমেনি দেশের জার্সির বাজার। মানুষের অর্থনৈতিক চাপের সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেট দলকে ঘিরে নানা আলোচনা–সমালোচনা ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন জার্সি ব্যবসায়ীরা।

বিসিবি কেন এবার প্লেয়ার্স এডিশনের জার্সি বিক্রির জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্বত্ব দেয়নি, তা জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো এই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে এর আগে দুই-একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। আবার ক্রেতারাও নানাভাবে ঠকেছেন। সার্বিক বিবেচনায় এবার তাই কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।’

‘দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে আমরা এবার কোনো জার্সি তৈরি করিনি। কারণ বিশ্বকাপের মতো আসরের জন্য করা জার্সি সারা বছর বিক্রি করা যায় না।’
তাইজুল ইসলাম, গুলিস্তান সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেটের স্পোর্টস হ্যাভেনের বিক্রেতা

তবে ভবিষ্যতে বিসিবির তত্ত্বাবধানে আনুষ্ঠানিক জার্সি বিক্রি করার পরিকল্পনা আছে উল্লেখ করে নিজাম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বাচলে নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্রিকেটসামগ্রী বিক্রির জন্য বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রিকেটসামগ্রী বিক্রির জন্য বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও বিসিবির আছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় বিসিবি স্পোর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস ডিজাইন নামের একটা প্রতিষ্ঠানকে প্লেয়ার্স এডিশনের জার্সি তৈরির দায়িত্ব দেয়। ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ের মাধ্যমে সেসব জার্সি বিক্রি করা হয়।

ফুটবল ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ এলেই দেশে জার্সির বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষেও রাজধানীর জার্সি ব্যবসায়ীরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তবে এবার ব্যবসা সেভাবে জমেনি। বর্তমানে বাজারে যেসব জার্সি বিক্রি হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের জার্সি। এর বাইরে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের জার্সির চাহিদাও রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে এসব দেশের জার্সির চাহিদা মোট চাহিদার ১০ শতাংশের কম।

রাজধানীতে জার্সিসহ ক্রীড়াসামগ্রীর বড় বাজার গড়ে উঠেছে গুলিস্তান, স্টেডিয়াম মার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায়। গতকাল এ এলাকার ক্রীড়াসামগ্রীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চেয়ে এবারের বিশ্বকাপের জার্সি বিক্রির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। তবে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন যে বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যেতে পারে, তাহলে জার্সির ব্যবসা হয়তো আরেক দফা জমবে।

গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের তালুকদার স্পোর্টসের স্বত্বাধিকারী সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বকাপ এলে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ জার্সি বিক্রি হয়। কোনো দিন তা হাজারের কাছাকাছিও হতো। এবারের বিশ্বকাপে সেটা ২৫০ থেকে ৩০০। তবে বাংলাদেশ ভালো করলে বেচাকেনা আরও বাড়বে।

এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বা দোকান পাওয়া গেছে, যারা এবার জার্সি তৈরিই করেনি। তাই ক্রেতা পেলে অন্য দোকান থেকে জার্সি নিয়ে এসে বিক্রি করছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটাঙ্গনে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ফলে ব্যবসার পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ বলে এবার ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসায় খুব বেশি বিনিয়োগ করেননি।

গুলিস্তান সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেটের স্পোর্টস হ্যাভেনের বিক্রেতা তাইজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে আমরা এবার কোনো জার্সি তৈরি করিনি। কারণ বিশ্বকাপের মতো আসরের জন্য করা জার্সি সারা বছর বিক্রি করা যায় না।’

গুলিস্তানের পাইকারি প্রতিষ্ঠান নাইক স্পোর্টসের বিক্রেতা রাজীব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব জার্সি ২০ হাজার তৈরির পরিকল্পনা ছিল, তা করেছি ১০ হাজার। ব্যবসা জমলে নতুন করে আবার জার্সি তৈরি করব।’

বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে বিপণিবিতানের পাশাপাশি গুলিস্তানের ফুটপাতের জার্সির বাজারও জমে ওঠে। কিন্তু এবার ফুটপাতের বেচাকেনায়ও মন্দা। ফুটপাতের বিক্রেতারা বলছেন, এবার জার্সির চাহিদা খুবই কম।

বিপণিবিতান ও ফুটপাতে জার্সির বেচাকেনা না জমলেও অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ফাহিম ওয়্যারহাউস বিডি’র মালিক ফাহিম সাজ্জাদ বলেন, ‘বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জার্সি বিক্রি করেছি। এখনো সাড়া পাচ্ছি। বাংলাদেশ ভালো করলে ব্যবসা আরও ভালো হবে।’

জার্সির দরদাম যেমন

বিসিবি যেহেতু প্লেয়ার্স এডিশনের অফিশিয়াল বিক্রির অনুমতি কাউকে দেয়নি, সুতরাং বাজারের সব জার্সিই নকল। এসব জার্সির দাম মানভেদেও ভিন্ন ভিন্ন। গুলিস্থান বা তার আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানের জার্সি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। একটু ভালো মানের জার্সি কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া ফুটপাতের জার্সি পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকার মধ্যে।

তবে এর বাইরে প্লেয়ার্স এডিশনের জার্সি বলে দুই ধরনের জার্সি বিক্রি হচ্ছে। তার একটি তুলনামূলক মোটা কাপড়ের। এই জার্সির দাম রাখা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। আর প্লেয়ার্স এডিশনের জার্সি হিসেবে প্রিমিয়াম একটা জার্সি কিছু বিক্রেতার কাছে পাওয়া যাচ্ছে। থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের কাপড়ের জার্সি বলে। সেটা বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।