সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, সারসহ ২৮ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন

স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী দামে বিক্রি করার জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল কিনে দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও ২৫ হাজার টন মসুর ডাল।
তেল ও ডাল কেনায় সরকারের ব্যয় হবে ৩৮৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সয়াবিন তেল কেনা হচ্ছে ভারতীয় একটি কোম্পানি থেকে। আর মসুর ডাল কেনা হবে তিনটি কোম্পানি থেকে, যার একটি ভারতের ও দুটি দেশের কোম্পানি। তাদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে অর্থাৎ দরপত্র ডাকা ছাড়া।

আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ–বিষয়ক প্রস্তাবগুলো অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, তেল ও ডাল ক্রয়ের প্রস্তাবসহ কমিটিতে মোট ২৮টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

সাঈদ মাহবুব খান জানান, ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত সয়াবিন তেল কেনা হবে ভারতের গ্রিন নেশন বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানি থেকে। এতে ১৪১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৬৯ টাকা।

জানানো হয়, ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে ভারতের উমা এক্সপো প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে। এ মসুর ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডাল কিনতে খরচ হবে ১০১ টাকা ৬৯ পয়সা। এ ছাড়া ১৫ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে বি অ্যান্ড সি ইনকরপোরেশন এবং সেনা কল্যাণ সংস্থার কাছ থেকে। এতে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়ছে ১০০ টাকা।

এদিকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে ক্রয় কমিটিতে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড সরবরাহ করবে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার। আর কাতারের মুনতাজাত সরবরাহ করবে বাকি ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার। একই সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সাঈদ মাহবুব খান জানান, সুইজারল্যান্ড থেকে ১ কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে ক্রয় কমিটিতে। সুইজারল্যান্ডের এম এস টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে পেট্রোবাংলা এই তরলীকৃত গ্যাস কিনবে ৭১৩ কোটি ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে।

এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এম এস গ্রেন ফ্লাওয়ার ডিএমসিসি নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টন গম কেনার আরেক প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

অন্যদিকে দেশের চারটি জায়গায় নদী খনন করার পূর্ত কাজ পেয়েছে ডক ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। কোম্পানিটিকে ৩৫৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় এ কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ‘মোংলা থেকে রামপাল খেয়াঘাট পর্যন্ত’ খননে ৯৬ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ‘উলানিয়া থেকে মাওয়া এবং দৌলতদিয়া থেকে নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত’ খননে ৮৭ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ‘নাজিরগঞ্জ থেকে চর ভবানীপুর পর্যন্ত’ খননে ৮৭ কোটি ৯০ লাখ এবং ‘ভবানীপুর থেকে পাকশী পর্যন্ত’ ৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টোল প্লাজা এবং ১২টি র‌্যাম্প নির্মাণের পূর্ত কাজ পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ৪৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ‘নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটাখোলা-মঠখোলা-কটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া-আড়াইহাজার-নরসিংদী-রায়পুরা দুটি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজ পেয়েছে যৌথভাবে তাহের ব্রাদার্স এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এ কাজে ব্যয় হবে ৩০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। একই প্রকল্পের ২৪৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার আরেকটি প্যাকেজের পূর্ত কাজ পেয়েছে রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

ক্রয় কমিটিতে ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ১১ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ক্রয় কমিটিতে। ১২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার এ কাজ পেয়েছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।