অফিসসজ্জার সামগ্রী কিনতে চায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

খরচ কমানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের জন্য ২০ ধরনের সাজসজ্জার সামগ্রী কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে অফিস করেন। আর নিজের গায়ে জড়িয়ে রাখা ব্লেজার (কোট) কখনো গা থেকে খুলে ঝুলিয়ে রাখবেন। তাই তার জন্য চাই কোট হ্যাঙ্গার। আয়েশ করে গা এলিয়ে পাদানিতে পা রেখে বিশ্রাম নেবেন। এ জন্য চাই পাদানি। আয়েশ করে টিভি দেখবেন, ঠান্ডা পানি খাবেন, তাই দরকার টিভি, ফ্রিজ। এমনকি বছর বছর দরজা-জানালার নতুন পর্দা লাগবে। দেয়াল আয়না ছাড়া তো নিজের আভিজাত্য বোঝানোই যাবে না। এসব ছাড়া যেন কিছুতেই চলবে না। এত দিন ধরে এসব দিয়ে সজ্জিত হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল। কিন্তু এখন কি এ ধরনের বিলাসিতা করার সময়?

কৃচ্ছ্রসাধনের এই সময়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নিজেদের কর্মকর্তাদের জন্য এ ধরনের আসবাব ও মালামাল কিনতে চায়। গত ২৮ জুলাই মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি বিভাগ, উইং, অধিশাখা ও শাখায় এসব জিনিসের চাহিদার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে পরিকল্পনা বিভাগের সাধারণ শাখা থেকে। তালিকায় ২০ ধরনের মালামাল আছে। যেমন সেক্রেটারিয়েট টেবিল, সাইড টেবিল, কনফারেন্স টেবিল, টি-টেবিল, কুশন, চেয়ার (রিভলভিং ও কাঠের চেয়ার), সোফাসেট ও কাভার, বুক শেলফ, স্টিলের ফাইল ক্যাবিনেট, আলমারি, পাদানি, ফাইল র‍্যাক, পর্দা, পাপোশ, দেয়াল আয়না, টেবিল টপ গ্লাস, কোট হ্যাঙ্গার, ফ্রিজ, টিভি, ওয়ারটার ফিল্টার, মাইক্রো ওভেন, রুম হিটার এবং স্ট্যান্ড ফ্যান। প্রতিটি বিভাগ তাদের কর্মীদের জন্য এসব আসবাব কতটি লাগবে, তা শিগগিরই জানাবে। তারপর এসব কেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। অবশ্য এবার যাচাই-বাছাই হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই কিছু আসবাব লাগে। এর বাজেটও বেশি নয়। কিন্তু বাহুল্য বাদ দিতে হবে। বেশি দামের জিনিসপত্র না কেনাই ভালো। এখনই না কিনলে হয়, এমন জিনিস বাদ দিতে হবে।

প্রতিবছরই কিছু আসবাব লাগে। এর বাজেটও বেশি নয়। কিন্তু বাহুল্য বাদ দিতে হবে। বেশি দামের জিনিসপত্র না কেনাই ভালো। এখনই না কিনলে হয়, এমন জিনিস বাদ দিতে হবে।
আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব

ইতিমধ্যে কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। অর্থনীতির ওপর চাপ কমাতে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমন অবস্থায় এ ধরনের মালামাল কেনা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি অর্থবছরে এ ধরনের আসবাব কেনার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ আছে ৪৮ লাখ টাকা। এই টাকা যখন বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন কৃচ্ছ্রসাধনের আলোচনা শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের উপসচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার জন্য এসব জিনিস কেনা হয়। এ জন্য নিয়মিত বাজেট থাকে। এবার যেহেতু বিশেষ সময়, কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হচ্ছে, তাই বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার কর্মকর্তা কী ধরনের মালামাল দরকার, তা জানানোর পর কাটছাঁট করা হবে। প্রয়োজন না থাকলে বরাদ্দ দেওয়া হবে না।

জ্বালানি তেল ১৬০ লিটারের বেশি নয়

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি বিভাগ বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ব্যয়সাশ্রয়ী হতে সম্প্রতি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এসব নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো গাড়িতে জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মাসে জ্বালানি তেল ১৬০ লিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। একই এলাকায় একাধিক এলাকা পরিদর্শনের প্রয়োজন হলে আলাদা আলাদা গাড়ি ব্যবহার না করে পরিদর্শনকারীদের যৌথভাবে গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ৫০ শতাংশের মধ্যে ও জ্বালানির ব্যবহার ৮০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিগত ভ্রমণ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য প্রতিদিন অফিস সময়ের অন্তত দুই ঘণ্টা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বন্ধ রাখতে হবে। এসি চালানো হলে এর তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রাখতে হবে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার পরিহার করতে হবে। আইএমইডির মাসিক সমন্বয় সভা ও পর্যালোচনা সভা ছাড়া অন্যান্য সভা অনলাইনে করাকে উৎসাহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।