শেষ মুহূর্তে জমেছে খাইট্টা-হোগলার বেচাকেনা, দরদাম যেমন
কোরবানি ঈদের আগে চাহিদা বেড়েছে মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত গাছের গুঁড়ি বা ‘খাইট্টা’ ও হোগলার। ফলে পণ্য দুটির বেচাকেনাও জমে উঠেছে। খাইট্টা ও হোগলা ছাড়াও বাঁশের চাটাই, ঝুড়ি, ঝাড়ু এবং বিভিন্ন পশুখাদ্য যেমন— ভুসি, ধানের গুঁড়া বা তুষ, খইল, কাঁচা ও শুকনা ঘাস প্রভৃতির বিক্রিও বেড়েছে।
শনিবার অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা, যা কোরবানি ঈদ নামেই বহুল পরিচিত। এ সময় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও বড় বাজারগুলোতে খাইট্টা, হোগলার বিক্রি জমে উঠেছে। সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীরাই এসব পণ্য বিক্রি করেন।
বিক্রেতারা জানান, ঈদের আগের তিন থেকে চার দিনেই মোটামুটি খাইট্টা-হোগলার মূল ব্যবসা হয়। ঈদের আগের রাত বা চাঁদরাত পর্যন্ত চলে এ বেচাকেনা। সাধারণত কোরবানির পশু জবাইয়ের পর সেটির মাংস কেটে টুকরা করতে কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার হয়। প্রচলিত ভাষায় এটিকে ‘খাইট্টা’ বলে চেনেন অনেকে। এ ছাড়া মাংস পরিষ্কার স্থানে রাখা ও ভাগ করার জন্য লাগে হোগলা পাতার চাটাই, যা হোগলা নামেই বহুল পরিচিত। এ ছাড়া জায়গা পরিষ্কারের জন্য ঝাড়ু, মাংস ও ময়লা-আবর্জনা রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি প্রয়োজন হয়।
বিক্রেতারা জানান, সাধারণত সারা বছর কসাইখানায় পশু জবাই করা হয়। ফলে এসব পণ্যের ব্যবহার থাকে সীমিত। তবে কোরবানি এলে এসব পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
রাজধানী ঢাকার আদাবর এলাকার মৌসুমি খাইট্টা ও হোগলা বিক্রেতা সাইফুল্লাহ বলেন, কোরবানির পশু যতক্ষণ বিক্রি হবে, আমাদের পণ্যও ততক্ষণ বিক্রি হতে থাকবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ১৫ জন বিক্রেতা খাইট্টা, হোগলা, ভুসি ও ঘাস বিক্রি করছেন। এ ছাড়া আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়েও এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানান, ঢাকার সব স্থানেই এসব পণ্য নিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
দরদাম কেমন
বিক্রেতারা জানান, বাজারে আকারভেদে প্রতি পিস খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। আকার যত বড়, দামও তত বেশি। আবার গাছের ধরন ভেদেও দামে পার্থক্য হয়। যেমন তেঁতুলগাছের কাঠের দাম তুলনামূলক বেশি।
কারওয়ান বাজারে মৌসুমি খাইট্টা বিক্রেতা বাবুল মিয়া জানান, এ বছর কোরবানি উপলক্ষে তিনি পুরান ঢাকার একটি স মিল থেকে গাছের গুঁড়ি কাটিয়ে প্রায় দেড় শ পিস খাইট্টা বানিয়ে এনেছেন। প্রতিটি খাইট্টা তিনি বিক্রি করছেন ২৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। তাতে তাঁর ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকছে।
ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানা থেকে হোগলা এনেছেন কারওয়ান বাজারের মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. জাফর। হোগলার সঙ্গে তিনি শুকনা ও কাঁচা ঘাসও বিক্রি করছেন। প্রতি পিস হোগলা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। মো. জাফর বলেন, এ বছর হোগলার গ্রাহক বেশি। ফলে বেচাকেনাও ভালো হবে আশা করছি। যে পরিমাণ হোগলা এনেছিলাম, এখন পর্যন্ত তার অর্ধেক বিক্রি হয়েছে। আশা করি আজ বিকেলের মধ্যে সব বিক্রি শেষ হবে। হোগলার দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি বলে জানান এই বিক্রেতা।
অনেকেই এক সপ্তাহ বা তিন-চার দিন আগে কোরবানির পশু কিনে থাকেন। এই সময় পশুকে খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় পশুখাদ্যের। খোলাবাজারে সেগুলোও বিক্রি হতে দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, ঢাকায় পশুখাদ্যের মধ্যে প্রতি আঁটি শুকনা ও কাঁচা ঘাস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতি কেজি ভুসি ৬০-৮০ টাকা, খইল ১০০ টাকা ও ধানের তুষ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার কাঁঠালপাতাও বিক্রি করছেন অনেকে। কাঁঠালগাছের ছোট ছোট তিন-চারটি ডালের পাতা মিলিয়ে আঁটি বানানো হয়। প্রতিটি আঁটির দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
অবশ্য ক্রেতারা এসব পণ্যের দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, এ বছর দাম বেশি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজতুরী বাজার এলাকা থেকে হোগলা ও পশুর খাবার কিনতে কারওয়ান বাজারে আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী পেয়ারে আহমেদ। তিনি বলেন, এ বছর কোরবানির আনুষঙ্গিক এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি। তারপরও কোরবানির কাজ সহজ করতে বাড়তি দাম দিয়ে হলেও এসব সামগ্রী কিনতে হচ্ছে।