দুই লাখ টাকার কমে পাওয়া জনপ্রিয় সাত মোটরসাইকেল
যানজটের পরিস্থিতিতে স্বস্তি পেতে ও সময় বাঁচাতে অনেকেই এখন দ্রুত চলাচলের জন্য দুই চাকার যান, মানে মোটরসাইকেল কেনেন। বিশেষ করে তারুণ্যের বাহন হিসেবে এটি দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রেতাদের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একের পর এক নতুন মডেলের মোটরবাইক নিয়ে আসছে। ফলে দেশে এখন নানা ব্র্যান্ডের নানা মডেলের মোটরবাইক মিলছে। খুব দামি ও তুলনামূলক সস্তা—উভয় ধরনের মোটরসাইকেলই দেশে ভালো বাজার পেয়েছে।
চলতি বছরে দামে মোটামুটি সাশ্রয়ী অর্থাৎ দুই লাখ টাকার কম, আবার ব্যবহারের দিক থেকে প্রচুর চাহিদা আছে—এ রকম সাতটি মোটরবাইকের কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোকে বর্তমানে দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মোটরসাইকেল মনে করা হয়, যদিও এ নিয়ে কোনো জরিপ বা গবেষণার তথ্য নেই। মোটরসাইকেল বাজারজাতকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপ করে প্রথম আলো তুলনামূলক কম দামের জনপ্রিয় মোটরসাইকেলগুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আলোচনায় উঠে আসা সাত ব্র্যান্ড হলো হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি, টিভিএস, হিরো, বাজাজ ও রানার। ব্র্যান্ডগুলো নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে যেমন বাইকগুলো বিক্রি করে, তেমনি অনুমোদিত ডিলারদের দোকানেও মিলছে এসব।
রানারের বোল্ট ১৬৫ আর
গ্রাহকদের কাছে তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে মোটরসাইকেল সরবরাহ করছে দেশীয় ব্র্যান্ড রানার অটোমোবাইলস। কোম্পানিটির নিজস্ব তৈরি সব কটি মোটরসাইকেলের দামই দুই লাখ টাকার নিচে। এর মধ্যে একটি বোল্ট ১৬৫ আর। এটিই দেশে তৈরি সর্বোচ্চ ১৬৫ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেল।
পাঁচ গিয়ার ও ১৪ লিটার জ্বালানি ট্যাংকের মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে ৪০ কিলোমিটার পথ (মাইলেজ) পাড়ি দিতে পারে। বোল্ট ১৬৫ আরের দাম ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
হোন্ডার এক্স-ব্লেড
একসময়ে তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল হোন্ডা। এটি এত জনপ্রিয় ছিল যে অনেকেই মোটরসাইকেলকে হোন্ডা বলতেন। এখনো অনেকে সেটাই করেন। জাপানি কোম্পানি হোন্ডার দুই লাখ টাকার নিচে বেশ কিছু মডেলের মোটরসাইকেল রয়েছে। এর একটি হলো ১৬২ সিসির হোন্ডা এক্স-ব্লেড।
মোটরবাইকটিতে রয়েছে সম্পূর্ণ ডিজিটাল মিটার, এবিএস ব্রেকিং পদ্ধতি ও ১৩০ মিলিমিটার ওয়াইড রেয়ার (পেছনের) টায়ার। ফোর স্ট্রোক এসআই ইঞ্জিন–সুবিধার মোটরবাইকটিতে সর্বোচ্চ ৫৮ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইলেজ পাওয়া যায়। মোট চারটি রঙে পাওয়া যায় এক্স-ব্লেড। এই মোটরসাইকেলের দাম রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা।
হিরোর হাঙ্ক ১৫০ আর
সাশ্রয়ী দামে ভারতীয় ব্র্যান্ড হিরোর বেশ কিছু মডেলের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে হিরোর মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে নিটল-নিলয় গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নিলয় মোটরস। তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে দুই লাখ টাকার নিচে হিরোর যেসব মোটরসাইকেল পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি হাঙ্ক ১৫০ আর মডেল। ১৫০ সিসি ক্ষমতার এই বাইকের ইঞ্জিন ফোর–স্ট্রোক সিঙ্গেল সিলিন্ডার ধরনের।
বাইকটিতে পাঁচ গিয়ার ও প্রায় সাড়ে ১২ লিটার জ্বালানি ট্যাংক রয়েছে। এ ছাড়া আছে ডাবল ডিস্ক ও সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং পদ্ধতি। হাঙ্ক ১৫০ আর মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
ইয়ামাহার স্যালুটো ১২৫
ব্লু কোর প্রযুক্তিতে তৈরি ইয়ামাহার স্যালুটো ১২৫ মোটরসাইকেলটি চালককে কম বাজেটের মধ্যে জ্বালানি সাশ্রয় ও আরামদায়ক চালানোর অভিজ্ঞতা দেয়। চার গিয়ারের এই মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে ৬৫ থেকে ৭৮ কিলোমিটার মাইলেজ পাড়ি দিতে সক্ষম। বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে আরমাডা ব্লু ও ম্যাট গ্রিন এই দুই রঙে স্যালুটো ১২৫ বাইকটি পাওয়া যাচ্ছে। স্যালুটো ১২৫ মোটরসাইকেলটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকায়।
বাজাজের পালসার সিঙ্গেল ডিস্ক ১৫০
বাংলাদেশে ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজের মোটরসাইকেল বাজারজাত করে উত্তরা মোটরস লিমিটেড। বর্তমানে বাজাজের পালসার, অ্যাভেঞ্জার, প্লাটিনা, সিটি ১০০ ও ডিসকভারসহ মোট ১১ ধরনের মডেলের মোটরসাইকেল রয়েছে।
বাজাজের ২ লাখ টাকার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মোটরসাইকেল হচ্ছে পালসার সিঙ্গেল ডিস্ক ১৫০। আরামদায়ক ও দীর্ঘ সময়ের যাত্রার জন্য এটি বেশ ভালো। এটির রয়েছে ১৫ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক ও সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেকিং পদ্ধতি। এতে আছে ফোর স্ট্রোক, ২ ভাল্ব, ডিটিএস-আই ইঞ্জিন। বাইকটিতে পাওয়া যাবে ৪০ কিলোমিটার মাইলেজ। ১৫০ সিসির এই বাইকটির দাম ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা।
টিভিএসের অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০
বাংলাদেশের বাজারে ভারতের টিভিএস ব্র্যান্ডের বেশ কিছু মডেলের মোটরসাইকেল চলছে। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় অনেকের কাছেই টিভিএসের কয়েকটি মডেল বেশ জনপ্রিয়।
টিভিএসের বাইকগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় বাইক হচ্ছে অ্যাপাচি আরটিআর ১৬০ মডেলের বাইকটি। এসআই ও ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের বাইকটিতে রয়েছে ডুয়েল ডিস্ক অথবা সিঙ্গেল ডিস্ক ব্রেকিং পদ্ধতি। তা ছাড়া এর ব্রেকিং পদ্ধতিতে রয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল সুপার মোটো এবিএস। ১৭ লিটারের ফুয়েল ট্যাংকের বাইকটিতে ৪৫ কিলোমিটারের মতো মাইলেজ পাওয়া যায়। ম্যাট রেড, ম্যাট ব্লু ও ব্ল্যাক—এই তিনটি কালারে পাওয়া যাচ্ছে এই বাইক। ১৬০ সিসির বাইকটির দাম পড়ছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯০ টাকা।
সুজুকির জিক্সার মোনোটন ১৫৫
জাপানের গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সুজুকি মোটরসের বিভিন্ন দামের বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় মোটরসাইকেল রয়েছে। দেশে সুজুকির মোটরসাইকেল বাজারজাত করছে র্যানকন মোটরবাইক লিমিটেড।
দেশের বাজারে সুজুকির দুই লাখ টাকার নিচে বেশ কিছু মডেল থাকলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সুজুকি জিক্সার মোনোটন ১৫৫। লাল, হলুদ, কালোসহ মোট ছয়টি রঙে পাওয়া যাচ্ছে এই বাইক।
বাইকটিতে রয়েছে ১২ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক ও ১৫৫ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) ইঞ্জিন। আর এটিতে মাইলেজ পাওয়া যায় ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের এই বাইকে সামনে রয়েছে ডিস্ক ব্রেক পদ্ধতি। মোটরসাইকেলটির দাম ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৫০ টাকা। একই মডেলের মধ্যে জিক্সার মনোটোন ক্ল্যাসিক, ক্ল্যাসিক প্লাস ও জিক্সার মনোটোন ক্ল্যাসিক ম্যাট—এই তিনটি মডেল পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫০ টাকায়।